মামলা ও অসুস্থতায় বিপর্যস্ত কারাবন্দী মির্জা ফখরুল

Slider জাতীয় ঢাকা রাজনীতি

c91505832e3a42dabff5ff054fe2ca46-17

মির্জা ফখরুল ইসলাম মামলা আর অসুস্থতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের হৃদ্যন্ত্রে চারটি ব্লক ধরা পড়ে, এর তিনটিতে রিং বসানো হয়েছে। এখন তাঁর গলার ধমনিতে (নার্ভ) প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়েছে।
শারীরিকভাবে এমন অবস্থায় প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ধরে মির্জা ফখরুল কারাবন্দী। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত শনিবার থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। গত কয়েক বছরে তাঁর বিরুদ্ধে ৭৯টি মামলা করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুলের আইনজীবীরা বলেছেন, কাল রোববার পল্টন থানার তিনটি মামলায় হাইকোর্টে মির্জা ফখরুলের জামিনের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য আছে। এই তিন মামলায় জামিন পেলে এবং সরকার নতুন করে কোনো মামলায় তাঁকে না জড়ালে তিনি মুক্তি পেতে পারেন।
সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি মির্জা ফখরুলকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে আটকের পর গাড়ি পোড়ানো, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন ও মতিঝিল থানায় করা সাতটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর মধ্যে চারটি মামলায় ইতিমধ্যে তিনি জামিন পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে তিনটিতে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
মির্জা ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় গত সাড়ে পাঁচ মাসে মির্জা ফখরুলের ওজন প্রায় ১৫ কেজি কমে গেছে। গলার ধমনিতে প্রতিবন্ধকতার কারণে রক্ত সঞ্চালন কম হচ্ছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বিদেশে নিয়ে তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
রাহাত আরা বেগম স্বামীর চিকিৎসার জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। এর প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ গত মঙ্গলবার মির্জা ফখরুলকে বিএসএমএমইউতে ভর্তির নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে ভর্তিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন), উপ-কারা মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও কাশিমপুর কারাগারের (পার্ট-২) উপকারাধ্যক্ষকে (ডেপুটি জেলার) চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
বিএনপির সূত্র জানায়, গত তিন বছরে মির্জা ফখরুল ইসলামকে পাঁচ দফায় গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হন ২০১২ সালের এপ্রিলে। দলীয় নেতা ইলিয়াস আলীকে গুমের প্রতিবাদে ডাকা হরতাল পালনকালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় দুই মাস পর তিনি মুক্তি পান।
পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ৭৯টি মামলা হয়েছে। ২০১১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম মানহানির অভিযোগে একটি মামলা করেন তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম (বর্তমানে খাদ্যমন্ত্রী)। সম্প্রতি ওই মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন।
মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, মামলাগুলোর মধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে এক দিনেই মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়। প্রায় সব মামলাতেই বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে নাশকতা, গাড়ি পোড়ানো বা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলাগুলোর ধরন বিশ্লেষণ করে এই আইনজীবী বলেন, এমনিতেই রাজনীতিতে শিক্ষিত, মার্জিত ও পরিচ্ছন্ন মানুষেরা আসছেন না। মির্জা ফখরুলের মতো ব্যক্তিদের এ ধরনের হয়রানি ও রাজনৈতিক নিপীড়নমূলক মামলায় না জড়ানো উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর মধ্যে ২২টির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রমনা থানার তিনটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। বাংলামোটরে পেট্রলবোমা হামলায় পুলিশের এক সদস্যকে হত্যার মামলায় দেওয়া অভিযোগপত্রে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে এভাবে গ্রেপ্তার করে মাসের পর মাস কারাবন্দী রাখা সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের একটি উদাহরণ। এ ধরনের নজির রাজনীতিতে নেই। তিনি বলেন, এভাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়নের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *