২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ঢাকাই সিনেমার দাপুটে অভিনেতা আসলাম তালুকদার মান্না। মৃত্যুর ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না তার ভক্তরা। সেদিন নায়ক মান্নাকে হারিয়ে শোকে ‘পাথর’ ছিল পুরো পরিবার। যা আজও তার স্ত্রী শেলী মান্নাকে কাঁদিয়ে তোলে। কিংবদন্তি এই অভিনেতার মৃত্যুর পরদিন কী হয়েছিল? যা আজও অনেকের অজানা।
সেই অজানা কথাই প্রকাশ্যে আনলেন তার স্ত্রী শেলী মান্না। দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে তিনি তুলে ধরেন মান্নার মৃত্যুর পরবর্তী দিনগুলোর কথা। দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন’র পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, এক ভয়াবহ শোকাবহ দিন… পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল থেকেই আমার চারপাশের অনেক স্বজনের মানবিক চরিত্র চিত্রের বদল ঘটেছিল। শুরু হয়ে গিয়েছিল মানসিক ও আত্মসম্মান পীড়নের এক কঠিনতম সংগ্রাম।
কিংবদন্তি অভিনেতা, প্রযোজক মান্নার অগণিত ভক্তকুল, সিনেমাপ্রেমী স্বজনের ও আমাদের দাবি ও ভালোবাসায় গঠিত হয়েছিল ‘‘মান্না ফাউন্ডেশন’’। ট্রাষ্টি বোর্ড, কার্যকরী কমিটিসহ প্রায় ৪০ সদস্য বিশিষ্ট মিডিয়া ও সমাজের গণ্যমান্য উপদেষ্টাসহ ২০০৯ সালের এপ্রিলে পহেলা বৈশাখ এফডিসিতে মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল “মান্না ফাউন্ডেশন”।
অতঃপর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ জুড়ে ২৪৫টি অঙ্গসংগঠন তৈরি হয়। আমরা ২০১৪ সাল পর্যন্ত এর কার্যক্রম চালিয়ে যাই। এরপর আমরা এই ফাউন্ডেশনের কার্যকরী কমিটি থেকে শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিভাবক চাষী নজরুল ইসলাম ভাইসহ ৭ জনকে চিরতরে হারিয়ে ফেলি। আমরা স্বজনবিহীন কিছুকাল শোকের সাগরে ডুবে রইলাম। এরপর দেশে আড়াই বছর রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমাদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।
আমার স্বামীর এভাবে আকস্মিক চলে যাওয়া ও তার পরবর্তীতে আমার কাছের অনেক স্বজনের চিরতরে হারিয়ে ফেলা- এমনিতেই চারপাশে শূন্যতা ও বিষণ্ণতা বিরাজমান ছিল। তাই তার কর্মকাণ্ডকে ঘিরে ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে সমর্পণ করি। তখন প্রচার ও প্রসারের সুযোগ এতটা ছিল না, উপরন্ত আমিও একটি প্রচার বিমুখ ছিলাম।
তারপর থেকে আমি আমার স্বামীর রেখে যাওয়া চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করি। কিন্তু এখানেও আমি এক বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের ফাঁদের বেড়াজালে পরে যাই। আত্মসম্মান বাঁচাতে বৈষয়িক অনেক বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে লাগলাম। আমাকে শূন্যতা, বিষণ্ণতা ও চরম পরিস্থিতি থেকে একবোরে টেনে তোলার মতো কোনো স্বজন এগিয়ে আসেনি। যেমনটা আমি একসময় অনেকের অনেক সমস্যায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলাম।
শুরু হয় জীবন যুদ্ধের সংগ্রাম। সেই সঙ্গে কাছের মানুষেরাও হয়ে যায় চির অচেনা। মান্নার জীবদ্দশায় সে মানুষের মানবিকতা ও আন্তরিকতা নিয়ে চরম সত্য কথাই বলে গিয়েছেন, যা এখন বুঝতে পারি। আমরা আজ ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে রীতিমতো সোচ্চার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তরিকতা, ধর্ম ও ঈমানের সঙ্গে কজনই বা পালন করে থাকি?