শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পালিত হয় পবিত্র শবে বরাত। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার (৭ মাচ) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। ‘শবে বরাত’ শব্দ দুটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। বরাত আরবি ‘বারাআতে’র সমশব্দ। যার অর্থও মুক্তি।
পবিত্র কোরআনেও ‘বারাআত’ শব্দটি মুক্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই শবে বরাত অর্থ হবে মুক্তির রাত। কিন্তু হাদিস শরিফে এ রাতকে ‘শবে বরাত’ নামে আখ্যায়িত করা হয়নি; বরং একে বলা হয়েছে–‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য রজনী’।
পবিত্র এ রাতকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কিত একাধিক সহি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধশাবানের রাতে (শবে বরাত) সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪/১৭৬)
শবে বরাতের ক্ষেত্রে ছাড়াছাড়িতে লিপ্ত অনেকে এই হাদিসটিসহ শাবানের রাতের সব হাদিসকে অস্বীকার করেন এবং শবে বরাতকে বিদআত বলেন। কিন্তু ইমাম মুনযিরী, ইবনে রজব, নুরুদ্দীন হাইসামী, কাসতাল্লানী, যুরকানীসহ আরও অনেক হাদিস বিশারদ এটিকে সহি বলেছেন। শুধু তাই নয়; শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানীও (রহ.) সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহা গ্রন্থে এই হাদিসের সমর্থনে আরও আটটি হাদিস উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, এসব বর্ণনার মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহি প্রমাণিত হয়। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহাহ: ৩/১৩৫-১৩৯)। সুতরাং শবে বরাত আছে এবং এটি একটি ফজিলতপূর্ণ রাত–হাদিসের আলোকে এটি নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হলো।
শবে বরাত তথা নিসফ শাবান, অর্থাৎ মধ্যশাবান হলো রমজানের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্ব। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যতারিখ আসবে, তখন তোমরা রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো।
কারণ, এ রাতে সূর্যাস্তের পরেই আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, “ক্ষমাপ্রার্থী কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। রিজিকপ্রার্থী কেউ আছ কি? আমি তাকে রিজিক দেব। বিপদগ্রস্ত কেউ আছ কি? আমি তাকে বিপদ–মুক্ত করে দেব।”’ আল্লাহ এভাবে সকাল পর্যন্ত বলতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৪৪, হাদিস: ১৩৮৮; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)