তরুণীকে গণধর্ষণ ও হত্যার ০৫ (পাঁচ) জন ধর্ষক ও হত্যাকারী গ্রেফতার

Slider নারী ও শিশু

মোঃ সামদানি হোসেন বাপ্পী,ময়মনসিংহ:ময়মনসিংহ জেলাধীন ফুলবাড়ীয়া থানার রঘুনাথপুর গ্রামের আঃ রশিদ এর মেয়ে ফাহিমা আক্তার (১৪) রঘুনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৪/০২/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭.৩০ ঘটিকার সময় সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হয়ে ফিরে না আসলে তার পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। ২৫/০২/২০২৩ তারিখ ভোর ০৭.০০ ঘটিকায় তার বাড়ী হতে ২০০ গজ দক্ষিণ দিকে জনৈক আঃ মোতালেব এর আবাদী জমির পার্শ্ববর্তী আম গাছের ডালে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ফাহিমা আক্তার (১৪) এর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। ফুলবাড়ীয়া থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রস্তত করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। সুরতহালকালে ফাহিমা আক্তার (১৪) এর যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি গণধর্ষণ ও হত্যা বলে প্রতিয়মান হয়। ফাহিমা আক্তার (১৪) এর মা মোছাঃ হাছনা বেগম এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন ধর্ষক ও হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ীয়া থানার মামলা নং-৩২, তারিখ-২৬/০২/২০২৩ ইং, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ৯(৩) রুজু হয়।

ময়মনসিংহ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মাছুম আহম্মদ ভূঞা, পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক জঘন্যতম, ঘৃণ্য ও নৃশংস এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষক ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে জেলা গোয়েন্দা শাখা, ময়মনসিংহ-এর একাধিক টিম নিযুক্ত করা হয়। গোয়েন্দা শাখার অভিযান দল ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ০৩/০৩/২০২৩ তারিখ ঘটনায় জড়িত ০৫ (পাঁচ) জন ধর্ষক ও হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ধর্ষক মোঃ শাহজাহান (২৬), মাসুম বিল্লাহ (২৪) এবং মোঃ শহিদ(৪০) ফুলবাড়ীয়া রঘুনাথপুরসহ আশেপাশের এলাকার স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের অনুসরণ করে অপহরণ, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অন্যান্য অপরাধ ঘটিয়ে থাকে। গ্রেফতারকৃত আসামি শাহজাহান ও শহিদ অপহরণ ও গণধর্ষণের একাধিক ঘটনা ঘটিয়ে ইতোপূর্বে বহুবার কারাভোগ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, গণধর্ষণ এবং নগ্ন ভিডিও ধারণ ও প্রকাশের অভিযোগে একাধিক মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে মোঃ শাহজাহান, শহিদ ও মাসুম বিল্লাহ (২৫) ইটভাটার শ্রমিক বলে পরিচিত হলেও রাতের আধারে তারা অপহরণ, গণধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘৃন্য জঘন্যতম অপরাধ ঘটিয়ে থাকে। মোঃ শাহজাহান এর বিরুদ্ধে ১। ফুলবাড়ীয়া থানার মামলা নং-১১, তারিখ-১০-৬-২০১৯, ধারা-৭/৩০ (২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩) ২। ফুলবাড়ীয়া থানার মামলা নং-১, তারিখ- ০১-১২-২০২২, ধারা-৮ (১)/৮ (২)/৮(৩) (২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন)। আসামি মোঃ শহিদ (৪০) এর বিরুদ্ধে ১। ফুলবাড়ীয়া থানার মামলা নং-১ তারিখ- ০১-১১- ২০১৮, ধারা-১৫(৩) (১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন) তৎসহ ১৪৩/১৮৬/৩৩২/৩৫৩ পেনাল কোড-১৮৬০ এবং ফুলবাড়ীয়া থানার মামলা নং-২০, তারিখ- ২৯-০৯-২০১৯, ধারা-৭/৯(৩) (২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩) তৎসহ ৩২৩/৩২৪/৫০৬ পেনাল কোড-১৮৬০ রয়েছে।

আসামি মোঃ শাহজাহান (২৬) এর নিকট হতে গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার ফাহিমা আক্তার (১৪) এর জীবদ্দশায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, তারা পরস্পর ঘনিষ্ঠ সহচর। বিকৃত কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্য পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৪/০২/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭.০০ ঘটিকায় আসামিরা ফাহিমা আক্তার (১৪) এর বাড়ীর পার্শ্ববর্তী জায়গায় গিয়ে অন্ধকারে অপেক্ষায় থাকে। সন্ধ্যা অনুমান ০৭.৩০ ঘটিকার সময় প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে ফাহিমা আক্তার (১৪) ঘর থেকে বাইরে আসলে গ্রেফতারকৃত ৫ ধর্ষণকারীসহ আরো ৩ জন ফাহিমা আক্তার (১৪)কে মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক বাড়ীর পার্শ্ববর্তী আঁখ ক্ষেতে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে ২৫-২-২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ০১:৩০ ঘটিকায় ধর্ষণকারীরা পরিকল্পিতভাবে ফাহিমা আক্তার (১৪)কে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যাস্থল হতে প্রায় ৫০ গজ দূরে এনে লাশের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আসামিরা গাছের ডালে লাশ ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গনধর্ষণ ও হত্যার সাথে জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রাসেল মিয়া (১৯) ও মোঃ আলমগীর হোসেন (২৪) দ্বয়কে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব নিশাত জাহান-এর আদালতে তারা কাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *