অভিযুক্তরা হল ছেড়েছেন, ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার

Slider শিক্ষা


ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল ছেড়ে গেছেন অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রলীগ নেত্রী। গত মঙ্গল ও বুধবার দিনের বিভিন্ন সময়ে তারা হল ছেড়ে যান বলে নিশ্চিত করেছেন হলের শাখা কর্মকর্তা হামিদা খাতুন। এদিকে অভিযুক্তদের ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ ছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশনার পর হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করলেও নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন নির্যাতনকারীদের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেছেন।

এর আগে গত সোমবার তদন্ত প্রতিবেদনে ফুলপরীকে নির্যাতনের সত্যতা উঠে আসায় অভিযুক্ত পাঁচজনের আবাসিকতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় হল প্রশাসন। তাদের ১ মার্চ দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি হল সংযুক্ততা বাতিলে প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হয়। অভিযুক্ত ও বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং ২০-২১ শিক্ষাাবর্ষের হালিমা আক্তার ঊর্মি, ইসরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম, মুয়াবিয়া জাহান। বাকি চার ছাত্রলীগকর্মী অন্তরার অনুসারী বলে পরিচিত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে হল ছাড়েন মুয়াবিয়া জাহান। পরে দুপুরে নিজের মালপত্র গুছিয়ে হল ছাড়েন আরেক অভিযুক্ত ইসরাত জাহান মীম। তারা উভয়ই ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসে উঠেছেন।

এ ছাড়া হল প্রশাসনের নির্দেশনার আগেই হল ছেড়েছেন আকতার ঊর্মী। ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হলে গা ঢাকা দেন তিনি। এই অভিযুক্তও ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসে উঠেছেন। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হাইকোর্টের নির্দেশে হল ছাড়েন ছাত্রী নির্যাতনের ‘মূলহোতা ও হুকুমদাতা’ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী তাবাসসুম ইসলাম।

এদিকে ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গত রবিবার মধ্যরাতে ই-মেইলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। এর পর বুধবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত পাঁচ নেত্রীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণœ হয়- এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভায় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘এরা বহিষ্কারেরই যোগ্য। সেই রাতগুলোতে আমার ওপর যে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, তার উপযুক্ত শাস্তি তারা পেতে শুরু করেছে। সবেমাত্র ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার নয়; আমি তাদের স্থায়ী বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল চাই। তা না হলে ক্যাম্পাসে ফিরলে আমাকে মেরে ফেলার আশঙ্কা থাকবে।’ প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিলে ক্যাম্পাসে ফিরতে চান বলে জানান তিনি।

এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনার পর বুধবার বিকালে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সাময়িকভাবে এই দায়িত্ব পেয়েছেন হলটির সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আহসানুল হক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমরা হাইকোর্ট থেকে যে বার্তা পেয়েছি, সেই অনুসারে ওই হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করেছি এবং হলের সিনিয়র হাউস টিউটরকে সাময়িকভাবে হল চালানোর জন্য বলা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক ছাত্রীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সেদিন তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *