২৩ ফেব্রুয়ারি ছিলো হজের জন্য নিবন্ধনের শেষ দিন। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কোটা পূরণ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সাতদিনে ৯১ হাজার নিবন্ধন হবে কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা (সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী)। প্রাক-নিবন্ধন করেছেন প্রায় আড়াই লাখ হজ গমনেচ্ছু মুসল্লি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমের হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক হিসেবে প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন দুই লাখ ৪৯ হাজার ২২৪ জন। এদের মধ্যে আট হাজার ৩৯১ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুই লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন।
সর্বশেষ হিসাব মতে (১ মার্চ পর্যন্ত) হজে যেতে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৩৫ হাজার ৫৩৫ জন (সরকারিভাবে ৭ হাজার ৫৫৫ ও বেসরকারিভাবে ২৭ হাজার ৯৮০)। অর্থাৎ এক লাখ ২৭ হাজারের কোটা পূরণ করতে প্রয়োজন আরও ৯১ হাজার হজযাত্রী।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী হজের নিবন্ধনের শেষ তারিখ ছিল গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। প্রথম দফায় এই মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কোটা পূরণ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় এই মেয়াদ ৭ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এই সাতদিনে ৯১ হাজার নিবন্ধন হবে কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই প্রায় দেড় লাখ টাকা বেড়েছে।
আল ইহসান নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী এনায়েত মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিবছর এই সময়টাতে (রমজান মাসের আগ মুহূর্তে) এজেন্সিগুলোতে হজযাত্রীদের আসা-যাওয়া লেগে থাকে। এসময় আমরাও প্রচুর ব্যস্ত থাকি। প্রাক-নিবন্ধনকারীদের অধিকাংশই এই সময়টাতে হজে যাওয়ার জন্য নানাভাবে তদবির করেন। তবে এ বছর তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই। সবাই ভেবেছিলেন এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় খরচ কিছুটা কমবে। কিন্তু নানা খাতে খরচ বেড়ে প্রায় সাত লাখ হওয়ায় অনেকেই হজে যাওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন।
এক হজযাত্রী বলেন, এ বছরের হজযাত্রার নির্ধারিত খরচ প্রায় সাত লাখ টাকা। সৌদি আরবে গিয়ে আনুষঙ্গিক খরচ মিলে আট থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা খরচ হবে। এছাড়া দেশ থেকেও অনেক কিছু কেনাকাটা করতে হয়। সবমিলিয়ে এবার হজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। আমরা পরিবারের তিনজন হজ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এবার হয়তো তা সম্ভব হবে না।
আল রাইয়ান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সোহানুর রহমান সাঈদী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার হজযাত্রী নিয়ে কাজ করি। গত বছর ১৩০ জনকে হজে নিয়ে গিয়েছিলাম। এবার প্রাক-নিবন্ধন করা অনেকেই বলেছেন তারা অতিরিক্ত অর্থের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। আবার অনেকেই জমি-জমা বিক্রির পরও এবার হজের টাকা জোগাড় করতে পারছেন না।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- হাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী গণমাধ্যমকে বলেন, হজের খরচ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ডলারের দাম বৃদ্ধি ও বিমান বাংলাদেশের অতিরিক্ত বিমান ভাড়া। এবারের হজে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আরও বেশি ভাড়া নিতে চেয়েছিল। হাবের পক্ষ থেকে আমরা দরকষাকষি করে ভাড়া কমিয়ে এনেছি, যদিও এই ভাড়াও অনেকের জন্য বেশি। এবারও হয়তো নিবন্ধনের সময় আরও কয়েক দফায় বৃদ্ধি করা হবে। সব কোটা পূরণ হয়ে যাবে আমার বিশ্বাস।