বিডিআর বিদ্রোহের সমাধান করতে না পারায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মূল সমস্যা বাদ দিয়ে অন্যদিকে যেতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘বিডিআর বিদ্রোহের দিন খালেদা জিয়ার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা দায়িত্বহীন একটি মন্তব্য। একেবারে ডাইভারশন করা। বড় একটি ঘটনা যেখানে সমস্ত জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে যার সম্বন্ধে এসব বলা হচ্ছে তিনি দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা, প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের জন্য সারা জীবন কাজ করছেন। এখনো গণতন্ত্রের জন্য কারা অন্তরীণ রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ছিলেন। উনারা (আওয়ামী লীগ) মূল সমস্যায় না গিয়ে অন্যদিকে যেতে চান। কারণ এই ঘটনাগুলো সে সময় সমাধান করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ছিল একটা সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। এদের উদ্দেশ্য ছিল সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া। ভয়াবহ একটি চক্রান্ত, একটি ষড়যন্ত্র এ দেশের বিরুদ্ধে, এই জাতির স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এত সেনা কর্মকর্তাকে হারাতে হয়নি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত দুঃখজনক ও কলঙ্কজনক একটি দিন। এই দিনে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের পরিবার-পরিজনসহ হত্যা করা হয়। সৃষ্টি করা হয় ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব।’
তিনি বলেন, ‘এ সব সেনা কর্মকর্তারা আমাদের দেশের সম্পদ ছিলেন। আজকের দিনে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া চাইছি তিনি যেন তাদের বেহেশত নসিব করেন। এ ছাড়া অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা, বিডিআর কর্মকর্তা যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতিও আমরা গভীর শ্রদ্ধা এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা রক্ষা ব্যবস্থা, আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের স্বাধীনতা প্রচণ্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। এর পেছনে যারা রয়েছেন তাদের খুঁজে বের করে নিয়ে আসার যে তদন্ত প্রক্রিয়া হওয়া উচিত ছিল সেটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে সংযুক্ত হয়নি।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘প্রায় ৭ হাজারের মতো সৈনিক যারা অনেকেই সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ দাবি করেন, এখন পর্যন্ত তাদের মামলার শুনানি শেষ করা হয়নি। কারাগারে তারা ১৩- ১৪ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের পরিবার এবং সমস্ত ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি আজকে দাবি করব তাদের বিরুদ্ধে যে জুডিশিয়াল সমস্যাগুলো রয়েছে তা অতি দ্রুত সম্পাদন করে এদের একটা ব্যবস্থা করা উচিত, তাদের মুক্তি হওয়া উচিত। তাদের পরিবারগুলোকে একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করার ব্যবস্থা করবেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের মানুষ, রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য বাহিনী সকলে আমরা একসাথে এদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চাই। স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এজন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যে গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে, অসংখ্য মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে সেই গণতন্ত্র আমরা ফিরে পেতে চাই।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) ফখরুল আজম, রিয়ার এডমিরাল মুস্তাফিজুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জহুরুল আলম, কর্নেল ফয়সাল, কর্নেল জয়নুল আবেদীন, লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, মেজর (অব.) মো. হানিফ, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) কোহিনূর আলম নূর, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া প্রমুখ।