বগুড়ায় পোড়া-দহের মেলা ঘিরে গ্রামে গ্রামে জামাই উৎসব

Slider রাজশাহী


মাসুদ রানা সরকার , বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: হরেক পদের মাছ, বাহারি ফল আর মুখরোচক মিষ্টি- কোনটি নেই! ছেলে-বুড়ো, তরুণ-তরুণী আর দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা নারী-পুরুষের ভিড়ে প্রতিবারের মতো এবারও জমে উঠেছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা।

প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার বসে এই মেলাটি। একদিনের এই মেলাকে ঘিরে আশপাশের গ্রামগুলোতে জামাই উৎসব চলে তিন দিন। মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ। যে কারণে অনেকের কাছে পোড়াদহের মেলাটি মাছের মেলা হিসেবেও পরিচিত।

কথিত আছে প্রায় দুইশ’ বছর আগে পোড়াদহ এলাকায় এক হিন্দু সন্ন্যাসীর সাধনায় একটি মরা বটগাছ আবার জীবিত হয়। এ কারণে ওই স্থানটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ পূজনীয়। আর ওই ঘটনাটিকে স্মরণ করতেই প্রতি বছর মেলার আয়োজন করা হয়।

প্রতি বছর ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় বড় সাইজের বাঘাইড় মাছ উঠলেও সেটি মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এবার বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। এ কারণে গত দুই বছর ধরে মেলায় বাঘাইড় মাছ দেখা যাচ্ছে না।

তবে যথারীতি রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, বিগ হেড, ব্লাড কার্প, আইড়, সিলভার কাপ ও কার্পসহ সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ উঠেছে। বাঘাইড় মাছ না ওঠায় এবার অন্য মাছের দাম চড়েছে।

এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় সাইজের ব্লাক কার্প মাছের ওজন ৪০ কেজি। প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা হিসেবে মাছটির দাম হাঁকা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা।

মেলায় নানা আয়োজন

এ বছর মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ নিয়ে আসা গাবতলীর গোলাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা বজলুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি নাটোর থেকে ৪০ কেজি ওজনের ব্লাক কার্প মাছ এনেছি৷ এটিই এই মেলার সবচেয়ে বড় মাছ। প্রতি কেজি দুই হাজার টাকা মাছটি বিক্রি করতে চাই। তবে কেউ দামাদামি করলে কিছুটা কমাতে পারি।’

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মাছ বিক্রেতা বাচ্চু সরকার বলেন, ‘৩০ কেজি ওজনের কাতল এনেছি। দাম ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি চাচ্ছি। দেখি দাম মিলে গেলে বিক্রি করে দিব।’

এছাড়াও মেলায় রুই ৪০০-৫০০ টাকা কেজি, বোয়াল এক হাজার ২০০ টাকা কেজি এবং আইড় মাছের দাম চাওয়া হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা কেজি, নদীর পাঙ্গাস এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ মেলায় মাছের আকৃতির ছোট বড় সাইজের প্রায় বিশ রকমের মিষ্টি বিক্রি হয়। কাতলা মাছের আকৃতির ১১ কেজি ওজনের মিষ্টি এবার সবার নজর কেড়েছে। প্রতি কেজি ৪০০ টাকা হিসেবে ওই মিষ্টির দাম চাওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়া কুল (বরই) এবং কেশরসহ নানা স্বাদের ফলও উঠেছে মেলায়। এমনকি বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও ছিল চোখে পড়ার মতো।

মেলায় এসেছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার বাসিন্দা আলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, মেলা উপলক্ষে তার মেয়ে এবং জামাইসহ নাতি-নাতনিরা এসেছেন। তাদের জন্য তিনি ১০ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে সাত কেজি ওজনের একটি আইড় মাছ কিনেছেন।

নুরুল আমিন নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, তার শ্বশুরবাড়ি সংলগ্ন এ মেলায় তিনি প্রতি বছর আসেন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও তিনি বিভিন্ন ধরনের পাঁচ কেজি মিষ্টি কিনেছেন।

পোড়াদহ মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘এবারের মেলায় প্রায় দুই হাজার দোকান বসেছে। এর মধ্যে মাছের দোকানই চার শতাধিক। এসব দোকানে কয়েক কোটি টাকার মাছ কেনাবেচার টার্গেট করা হয়েছে। গত দুই বছর করোনার কারণে মেলা সেভাবে জমেনি। এবার করোনার কোনো প্রভাব নেই। তাই মেলায় বিপুল লোকজনের সমাগম হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *