‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’ নামের ফেসবুক আইডি ছড়াছড়ি

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী


সম্প্রতি ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’ নামে অসংখ্য ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলা হচ্ছে। প্রতিদিনই এই নামের আইডির সংখ্যা বাড়ছে। এসব আইডি থেকে অনেককেই বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠানো হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ সানন্দে সাড়া দিয়ে বন্ধুত্ব করছেন; নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির আইডি ভেবে অভিনন্দন আর প্রশংসার জোয়ারে ভাসাচ্ছেন।

ভুয়া এসব আইডির ফ্যান-ফলোয়ার হু হু করে বাড়ছে। এসব আইডির মেসেঞ্জার থেকে ফ্যান ফলোয়ারদের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে বঙ্গভবনে বিভিন্ন পদে চাকরি প্রদানের। বিকাশ/নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চাওয়া হচ্ছে টাকাও। ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’ নামে খোলা ১৮টি আইডি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত রবিবার মো. সাহাবুদ্দিনকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকে এ নামে ফেসবুক আইডি খোলার হিড়িক পড়ে গেছে। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির ছবি ও নাম দিয়ে নতুন আইডি খোলার

পাশাপাশি পুরনো অনেক আইডির নামও পাল্টিয়ে ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’ করা হয়েছে। এমনকি কিছু আইডিতে জেন্ডারের ঘরে লেখা আছে ‘ফিমেল’। এসব ফেসবুক আইডি থেকে আবার অন্যগুলোকে ‘ভুয়া’ বলে দাবি করা হচ্ছে। আগের আইডি টেকনিক্যাল কারণে নষ্ট হয়ে গেছে দাবি করে গত মঙ্গলবার এ নামে খোলা একটি আইডি এ মর্মে ঘোষণাও দিয়েছে, ‘আমার নাম ও ছবি দিয়ে অনেক আইডি খোলা হয়েছে, দয়া করে এড়িয়ে চলবেন’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখায় বেশ জনপ্রিয় আরিফ আর হোসাইন। তিনি গতকাল বুধবার আমাদের সময়কে বলেন, ‘নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার আগেই তার নামে অগণিত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। আজ (বুধবার) সকালেও আমি প্রেসিডেন্টের (‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’) নামে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেয়েছি। নিজেকে মহামান্য দাবি করা সেই আইডি আমি ব্লক করে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, এমন একটি আইডি ব্লক করার পর সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামের আরেকটি আইডি থেকে আমাকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘আপনাকে বঙ্গভবনের চিফ অব স্টাফ করা যায় কিনা ভাবা হচ্ছে।’ বিস্মিত আরিফ আর হোসাইন ওই বার্তার প্রত্যুত্তরে লেখেন, ‘আমি তো বেসামরিক লোক, আমি কেমনে চিফ অব আর্মি স্টাফ হবো?’ এমন প্রশ্নে ওই আইডি থেকে বলা হয়, ‘বিকাশ করেন, দেখি একটা ব্যবস্থা করে ফেলব।’

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিশিষ্ট ব্যক্তি, জনপ্রিয় মানুষ ও মিডিয়ার সেলিব্রেটিদের নামে সাধারণত ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান বা চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় টাকা-পয়সা। তারা বলছেন, সেলিব্রেটিদের ছবি ও নামসহ অ্যাকাউন্ট খোলা হলে বিপুল সংখ্যক মানুষ বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠায়। দ্রুত ফ্যান-ফলোয়ার বেড়ে যায়। পরে সেই আইডি বিক্রি করে দেওয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ আমাদের সময়কে বলেন, নবনির্বাচিত মহামান্য রাষ্ট্রপতির নামে খোলা ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আমাদের নজরে এসেছে। আমরা যাচাই-বাছাই করছি। প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের টিম কাজ করছে।

বিখ্যাত ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, খেলোয়াড়, বিনোদন জগতের সেলিব্রেটিদের নামে অসংখ্য আইডি দেখা যায় ফেসবুকে। এসব আইডির কোনটা আসল, কোনটা ভুয়া বোঝা মুশকিল। ভুয়া আইডি থেকে এমন কিছু পোস্ট দেওয়া হচ্ছে বা এমন সব বিষয় পোস্ট করা হচ্ছে যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। এতে করে যার নামে খোলা হচ্ছে অ্যাকাউন্ট, তিনি বিব্রত হচ্ছেন।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় নেতাদের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে প্রতারণার ঘটনায় ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ৭৫২টি ফেসবুক আইডি ও পেজসহ ১ হাজার ৩৩২টি ভুয়া ফেসবুক আইডি বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)।

গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তারা এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। পোস্টে লেখা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর নামে চালু সকল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নেটওয়ার্কিং সাইট ভুয়া। কাজেই শেখ হাসিনার নামে চালু ভুয়া ফেসবুক আইডির পোস্ট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নেটওয়ার্কিং দেখে কারও বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

তবে সচেতনতামূলক পোস্ট ও আইডি বন্ধ করেও এসব প্রতারকের অপকর্ম পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। গতকালও প্রধানমন্ত্রীর নামে বিপুল সংখ্যক ভুয়া আইডি দেখা গেছে ফেসবুকে।

ভুক্তভোগী চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারেন

পুলিশ বলছে, সাইবার সিকিউরিটি আইনের ২৪, ২৫ ও ২৯ ধারা মোতাবেক এসব ভুয়া আইডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ অপরাধের জন্য ৩ থেকে ৫ বছরের জেল অথবা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ভুক্তভোগী যে কেউ এ আইনে প্রতিকার চাইতে পারেন। প্রতিকার চাইলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করে অপরাধীকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *