যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনী ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং মুক্ত ও অবাধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি একই সাথে রোহিঙ্গা সঙ্কট ও জলবায়ু পরির্বতনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকায় দুই দিনের সফর শেষে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠক এবং নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন।
ডেরেক শোলে গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা এসে পৌঁছান। তিনি সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি প্রশাসকের কাউন্সেলর কিনটন হোয়াইট, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি এলিজাবেথ হোস্ট এবং গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিসের অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ বেথ ভ্যান স্কাক। ডেরেক শোলে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা ছেড়ে গেছেন।
দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিংয়ে শোলে বলেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আশাবাদী। এটা ৫১ বছরের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব। আমরা আগামী ৫১ বছর বা তারও বেশি সময় এই অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করছি। আমাদের অনেক অভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, অনেক সুযোগও রয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা ও অন্যান্য অভিন্ন অগ্রাধিকারে আমরা সম্পর্ক জোরদার করতে চাই।
ডেরেক শোলে বলেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিই বলেই আমরা আজ এখানে। ওয়াশিংটন থেকে ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের সফরের ধারাবাহিকতায় আমি এসেছি। এটা বাংলাদেশের সাথে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পর্কের গুরুত্বের একটা প্রতীক। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যা করছে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। আমরা একই সাথে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ মোকাবেলার চেষ্টা করছি, যার শিকড় রয়েছে মিয়ানমারে। ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো ছিল। এই সম্পর্ককে আমরা আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশে নতুন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রকে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সহায়তা করছে। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বেশি মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। তারা আমাদের সাথে একমত, রোহিঙ্গাদের জীবনমানের পরিবর্তন করতে হবে, আরো উন্নত করতে হবে। ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের আশার আলো দেখাতে হবে।
সার্বিক দিক থেকে আলোচনা খুবই ভালো হয়েছে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ডেরেক শোলে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে এসেছেন, যারা প্রত্যেকে নামকরা কূটনীতিক। এ জন্য আমরা খুশি।
সম্পর্ক গভীর করতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া : একই দিন ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টলে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সফররত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জেং সুং মিন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য রাজনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আমাদের মধ্যে সহযোগিতা আরো বাড়াতে হবে। আমরা কী চিন্তা করছি সেটি একে অপরকে জানাতে হবে। এটি আমার প্রেসিডেন্টের দর্শন। এ জন্য তিনি আমাকে বাংলাদেশ পাঠিয়েছেন।
নিজের সফরকে সম্পর্কের নতুন সূচনা হিসেবে অভিহিত করে বিশেষ দূত বলেন, সিউলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব। আমাদের বিবেচনায়, সামনের বছর বাংলাদেশের নির্বাচনের পরে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া সফরে এলে ভালো হবে।
জেং সুং মিন বলেন, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে দক্ষিণ কোরিয়া অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে পারি।