বগুড়ায় শজিমেক হাসপাতালে এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

Slider রাজশাহী

মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ফিস্টুলা ম্যানেজমেন্ট এন্ড রেফারেল সেন্টার শীর্ষক এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী, মঙ্গলবার, বেলা ১২ টার দিকে শজিমেক কনফারেন্স রুমে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আলম। তিনি বলেন, ‘শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিস্টুলা অপারেশন অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও সহায়তা করা হবে। হাসপাতালটি ফিস্টুলা অপারেশন জন্য একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে যাতে প্রতিটি রোগী পুনর্বাসন এবং সমাজে ও পরিবারে ফিরে যেতে পারে।’

সভায় শজিমেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মোঃ রেজাউল আলম বলেন, ফিস্টুলা এমন একটি বিষয় যারা আক্রান্ত হয় তারা পরিবার থেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা মানবেতর জীবন-যাপন করে। আমরা ফিস্টুলা নিয়ে এর মধ্যেই কাজ শুরু করেছি। আমার মনে হয় খুব ভালো কাজ হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক সচেতনতা বেশী জরুরী। মানুষ যাতে সময় মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যায় সেজন্য তাদের সচেতন করতে হবে। কেননা মানুষ যদি সচেতন না হয় আমরা কোনোভাবেই সফলভাবে কাজ করতে পারবো না। আমরা শজিমেক হাসপাতালে এর মধ্যেই ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসা শুরু করেছি। এখানে এ পর্যন্ত যতগুলো অপারেশন হয়েছে মোটামুটি সবই সফলভাবে হয়েছে। সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করলেই ফিস্টুলা রোগ নির্মূল করা সম্ভব হবে।’

মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় অনুষ্ঠিত ওই এ্যাডভোকেসি সভায় উপস্থিত ছিলেন শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: আব্দুল ওয়াদুদ, সহকারী পরিচালক ডা: মুহাম্মদ যাকারিয়া রানা, উপাধ্যক্ষ ডা: সুশান্ত কুমার সরকার, (এ্যানেস:) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: নিতাই চন্দ্র সরকার, স্বাচিপ সভাপতি ডা: মো: সামির হোসেন, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: টি এম. নুরুজ্জামান, বিভাগীয় প্রধান (গাইনী) ডা: আখতারী হোসেন চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান (ইউরোলজি) ডা: মো: আহসান হাবীব মন্ডল, সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ শফিউল আজম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: শহিদুল ইসলাম, জেলা প:প কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সাঈদ মো: কাওছার রহমান, সহকারী অধ্যাপক (গাইনী) ডা: সুলতানা রাজিয়া, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা: মাফরুহা জাহান ও কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা: শারমিন হোসেন(মমি), সহকারী অধ্যাপক (ইউরোলজি) ডা: মো: আব্দুল বাতেন, আবাসিক সার্জন (গাইনী) ডা: ছালমা সুলতানা, শজিমেক এর মেডিকেল অফিসার (গাইনী) ডা: নুসরাত শারমিন, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অফিসার ডা: অনিমেষ বিশ্বাস, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের ফিল্ড অফিসার ডা: কানিজ ফাতেমা, জেলা এসআরএইচআর অফিসার ডা: ইশরাত আরা গনি এবং শজিমেক হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক তাহেরা বেগম।

সভায় UNFPA-এর কারিগরি কর্মকর্তা ডঃ অনিমেষ বিশ্বাস ফিস্টুলার বোঝা মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয়তা ও বগুড়া জেলা থেকে প্রসূতি ফিস্টুলা নির্মূল করার উপায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সফলভাবে কেস সনাক্তকরণ এবং পরিচালনায় কাজ করা হচ্ছে। যদি স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা কমিউনিটি পর্যায়ে স্ক্রীনিংয়ের মাধ্যমে সমস্ত রোগীকে দ্রুত শনাক্ত করা হয় তাহলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেই কেসগুলি কীভাবে অপারেশ করা যায় তার পরিকল্পনা করার একটি নির্দিষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’

হেলথ ইউএনএফপিএ এর প্রধান ডাঃ বিভাবেন্দ্র সিং রঘুয়ামশি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলা শেষ করতে বাধ্য করা হয়েছে এবং ইউএনএফপিএ সময়মতো লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করতে সরকারকে সহায়তা করছে। বিভাগীয় পর্যায়ে বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি কেন্দ্রের /স্থানের প্রয়োজন আছে, যেখানে ফিস্টুলায় আক্রান্ত রোগীরা সহজেই চিকিৎসা পাবে। সেক্ষেত্রে রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিভাগের বাইরে যেতে হবে না। যেহেতু ফিস্টুলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হয়, সেহেতু তাদের যত্নের গুণমান নিশ্চিত করার জন্য সব স্তরে বিশেষ করে সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিস্টুলা সেন্টারের কার্যকারিতা এই জেলা ও বিভাগে ফিস্টুলা নির্মূল করার জন্য একটি মাইলফলক এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

উল্লেখ্য, প্রসূতি ফিস্টুলা বিশ্বজুড়ে মহিলাদের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল সমস্যা। এটি মূত্রপথ এবং বা মলদ্বারের সাথে সংযোগকারী প্রজনন অঙ্গের একটি গর্ত। প্রসূতি ফিস্টুলায় আক্রান্ত মহিলাদের ক্রমাগত প্রস্রাব বা মল বা উভয়ই বের হয়। তাদের এই অবস্থার কারণে, তারা প্রায়ই সামাজিক ভাবে লাঞ্ছিত এবং অপমানিত হয় এমনকি নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই কঠিন সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগি হন সমাজের গরিব, অবেহেলিত এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মহিলা এবং মেয়েরা।

বিশ্বব্যাপী, বর্তমানে ১০-২০ মিলিয়ন মহিলা ফিস্টুলা নিয়ে জীবনযাপন করছেন। কয়েক দশক ধরে, প্রসূতি ফিস্টুলা বাংলাদেশের নারী স্বাস্থ্যের জন্য উল্লেখযোগ্য একটি উদ্বেগের কারণ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। জাতিসংঘ একটি প্রজন্মের জন্য প্রসূতি ফিস্টুলা নিমূল করার আহ্বান জানিয়েছে এবং বাংলাদেশ ২০৩০ সালের সময়সীমার আগে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।

বর্তমানে DGHS UNFPA, বাংলাদেশের সহায়তায় রংপুর বিভাগে, আংশিকভাবে রাজশাহী বিভাগে, সিলেট বিভাগে এবং চট্টগ্রাম বিভাগে (আংশিকভাবে) প্রসূতি ফিস্টুলা নির্মূলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে, পঞ্চগড় জেলাকে ফিস্টুলা মুক্ত জেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, জেলাটি এখন বাংলাদেশের প্রথম ফিস্টুলা মুক্ত জেলা।

শুধুমাত্র ফিস্টুলার চিকিৎসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং প্রসূতি ফিস্টুলা রোগীদের জন্য পুনর্বাসন প্রয়োজন। তাদের প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদী প্রি-অপারেটিভ চিকিৎসা এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে ফিস্টুলার জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবাগুলো তেমন উন্নত নয়, এবং এই পরিষেবাগুলির মান নির্ভর করে কি পরিমান রিসোর্স আমাদের রয়েছে। প্রসূতি ফিস্টুলা প্রতিরোধযোগ্য এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ভালো হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *