দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আজ সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে একটি মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছি। আরেকটি মনোনয়নপত্র গ্রহণের আবশ্যিকতা সেই কারণে ছিল না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ এর ৭ ধারা অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিনকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। আজকেই প্রজ্ঞাপন আমরা পাঠিয়ে দেবো।’
গতকাল রোববার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন ভবনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরে ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কাছে গত ৭ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তিনি এ মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি উচ্চ শিক্ষিত-চৌকস-বুদ্ধিদীপ্ত। দল, নেত্রী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তিনি যে নিবেদিত সেই প্রমাণ তার পুরো জীবনে রেখে গেছেন।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতা খায়রুন্নেসা। তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধি বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা চুপ্পু মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী।
পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আইন-পেশায় যোগ দেন এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরে ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতিও।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেসক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবন-সদস্য।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সামরিক আইন বলে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। কারাভোগের পর মুক্ত হলে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের কথিত পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু অভিযোগটি মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তার প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন কানাডা কোর্ট কর্তৃক সমর্থিত হয়।
১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুরের আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম-সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। চুপ্পু-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান (রনি) দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের উচ্চপদে কর্মরত।