সোহেল চৌধুরী স্বামী নন, আদালতকে জানালেন তুলি

Slider বিনোদন ও মিডিয়া


১৯৯৮ সালে রাজধানীর বনানীতে খুন হন জনপ্রিয় নায়ক সোহেল চৌধুরী। এ ঘটনার পর সোহেল চৌধুরীকে নিজের স্বামী দাবি করে আলোচনায় আসেন রওশন আরা আক্তার তুলি। এর ফলে আলোচিত এ মামলায় তাকে সাক্ষী করা হয়।

আজ রোববার ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটিতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। সোহেল চৌধুরীরও তার স্বামী ছিলেন না।

বিচারক জাকির হোসেন এ সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী এ সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করে জেরা করেন। জেরায় তিনি জানান, সোহেল চৌধুরীর বাসা ভাড়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখান থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে বান্ধবী আফরিন সুলতানার জন্য ফোন দেন। তখন সোহেল চৌধুরীর মায়ের সঙ্গে তার কথা হয়। পরে তিনি সোহেল চৌধুরীর মোবাইল নম্বর পান। এরপর তাদের মধ্যে মোবাইলে কথা হতে থাকে।

যদিও রাষ্ট্রপক্ষের জেরায় তুলি বলেন, নায়কের ফ্যান হিসেবে তাদের মধ্যে কথা হতো। তিনি সোহেল চৌধুরীর স্ত্রী ছিলেন না। পুলিশের কাছে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে স্বামী সোহেল চৌধুরী কেন লিখেছেন? সম্পত্তির লোভে লিখেছেন কি না? জবাবে তুলি বলেন, না।

এরপর এদিন ট্রামস ক্লাবের ম্যানেজার মেজর (অব.) এনামুল হাফিজ খান ওরফে এনায়েত হোসেন সাক্ষ্য দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, সোহেল চৌধুরী ও আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের মধ্যে ক্লাবের নিচতলায় তর্কাতর্কি হয়। তিনি এসে তা থামান। তিনি সোহেল চৌধুরীকে চলে যেতে বলেন। সোহেল চৌধুরী চলে যান। তবে আশিষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে কি না তা তিনি জানেন না। তাদের সাক্ষ্য শেষে আদালত আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

এ নিয়ে মামলাটিতে বাদী নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো।

সাক্ষ্য গ্রহণকালে আসামি তারিক সাঈদ মামুন হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজিদুল ইসলাস ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

মামলার অপর আসামি আদনান সিদ্দিকী, ফারুক আব্বাসী, ট্রামস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও সেলিম খান জামিনে পলাতক আছেন।

মামলা থেকে জানা যায়, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে ১১ বছর বিচার বন্ধ ছিল। এরপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ বাতিল হলেও সেই আদেশ সাত বছর বিচারিক আদালতে না আসায় বিচার বন্ধ ছিল। এরপর বিচারিক আদালত মামলার কেস ডকেট (সিডি) না পাওয়া নিয়ে প্রায় ৪ মাস বিচার শুরু হতে পারেনি।

সোহেল চৌধুরীকে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানীর ট্রামস ক্লাবের নিচে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় তার বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে বিচারের জন্য পাঠানো হয় ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকি ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন।

১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই ক্লাবের মধ্যে সোহেলের কথিত এক বান্ধবী নিয়ে আসামি আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে সোহেলের তর্ক হয়। উত্তেজিত হয়ে আজিজ ভাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন নায়ক সোহেল। সেদিন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হত্যার চেষ্টাও চালায় সোহেল। এ দুটি ঘটনার পর আসামিরা সোহেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার দিন সোহেল রাত ১টার দিকে বন্ধুদের নিয়ে ট্রামস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফাজ্জল হোসেন তাকে ঢুকতে না দেওয়ায় তখন তিনি চলে যান। সেদিন রাত আড়াইটার পর সোহেল ফের ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করলে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজিদুল ইসলাম ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক আব্বাস ও আদনান সিদ্দিকী সোহেলকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যায়। এ ঘটনার পর আদনান সিদ্দিকী হাতেনাতে ধরা পড়েন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *