নিজের বিরোধিতা না করতে নির্বাচনী এলাকার ৯ জন চেয়ারম্যানকে অজু করিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফের ওপর হাত রেখে শপথ করিয়েছেন রাজশাহীর আলোচিত সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী। ঢাকায় ডেকে নৌকার পক্ষে তাদের শপথবাক্য পাঠ করান এমপি নিজেই। এ সময় প্রত্যেকের শপথ নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের ভিডিও ক্লিপ এসেছে আমাদের সময়ের হাতে। গতকাল শনিবার রাতে সংসদ ভবনে এমপির কক্ষে এই শপথ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, শপথ নেওয়ার সময় মাথায় কালো ক্যাপ ও গায়ে টকটকে লাল টি-শার্ট পরে চেয়ারে বসা ছিলেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। টেবিলে রাখা পবিত্র কোরআন শরীফ। নিজে আসন থেকে চেয়ারম্যানরা একে একে উঠে এসে এমপির সামনে দাঁড়ান। পায়ের জুতা-স্যান্ডেল খুলে এমপির টেবিলে রাখা পবিত্র কোরআন শরীফের ওপর ডান হাত রেখে দাঁড়িয়ে নিজের নাম-পরিচয় দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করেন। তবে কারও শপথবাক্য এমপির মনপুত না হলে তিনি আবার শিখিয়ে দিচ্ছেন। শপথবাক্যে চেয়ারম্যানরা উল্লেখ করে বলেন, ‘নৌকার সঙ্গে আছি। থাকব আজীবন। নৌকার বিরোধিতা করব না এবং এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। ভষ্যিতেও থাকবে না ইনশাআল্লাহ।’
এ বিষয়ে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘কোনো চেয়ারম্যানকে ডাকা হয়নি। তারা নিজেরাই এসেছিল। দলের বৃহৎ স্বার্থে তারা ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য এভাবে শপথ নিয়েছেন। নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে তারা একটা ভালো কাজ করেছেন। এতে আপনাদের সমস্যা কোথায়। এত খোঁচাচ্ছেন কেন। তাদের তো উৎসাহ দেওয়া উচিত। খারাপ কাজ হলে আমি কি ভিডিও করতাম।’
জানা গেছে, এমপির সামনে কোরআন শরীফের ওপর হাত রেখে শপথ নেওয়া এই ৯ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের মধ্যে চারজন গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তাদের মধ্যে দুজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চেয়ারম্যান জানান, গত শুক্রবার তাদের ঢাকায় জরুরিভাবে ডেকে পাঠান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। জরুরি বিষয়ে আলাপ আলোচনার কথা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানদের ডাকা হয়। ঢাকায় পৌঁছে ওই দিন সন্ধ্যায় তারা সংসদ ভবনে ফারুক চৌধুরীর অফিসে যান। সেখানে তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন এমপি নিজেই। এ সময় নানা ভয়ভীতিমূলক কথাও বলা হয়।
এমপি ওমর ফারুকের এমন আদেশের আপত্তি করেন মাটিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা। তিনি এমপিকে বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে আছি এবং থাকব। কিন্তু কোরআন ছুঁয়ে শপথ করার যৌক্তিকতা নেই।’ এ সময় সোহেল চেয়ারম্যানকে বেশ ধমকান এমপি। এমপির ভয়ে তিনি আর কিছু বলেননি।
চেয়ারম্যানরা জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা গতকাল সন্ধ্যার পর সংসদ ভবনে এমপি ফারুক চৌধুরীর চেম্বারে যান। সেখানে নিজের টেবিলে ওপর পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। চেয়ারম্যানরা উপস্থিত হলে তাদেরকে অজু করে পবিত্র হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রথমে শপথ নিতে ডাকা হয় চর আষাড়িয়াদহের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলাকে। ভোলা নিজে বিএনপি করেন জানিয়ে শপথ নিতে আপত্তি করেন। তবে এমপির ধমকে শেষ পর্যন্ত তাকেও শপথ নিতে হয়। পর্যায়ক্রমে সকল চেয়ারম্যানকেই কোরআন শরীফে হাত দিয়ে শপথ নিতে বাধ্য করা হয়।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও আচরণের কারণে গোদাগাড়ীর ইউপি চেয়ারম্যানদের অনেকেই এমপি ফারুকের বিরোধিতা করে আসছিলেন। এ ছাড়া কলেজ অধ্যক্ষকে পেটান থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকার সিংহভাগ তুলে নেওয়া, নেতা ও চেয়ারম্যানদেরকে কটূক্তির অভিযোগ রয়েছে ফারুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এসব কারণে তার সংসদীয় এলাকার দলীয় নেতারা ও চেয়ারম্যানরা গত এক বছর ধরে তাকে এড়িয়ে চলেছেন।