ভাষার মাস, ভালোবাসার মাস ফেব্রুয়ারি। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস ঘিরে ব্যস্ত সাভারের ফুল বিক্রেতা-চাষিরা। দিন ঘনিয়ে আসছে আর আনাগোনা বাড়ছে ফুল ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি বাগানগুলোতে ভিড় বাড়ছে সৌন্দর্যপিয়াসীদের। ডলার সংকটসহ নানা কারণে তাজা ফুল ও কৃত্রিম ফুলের আমদানি কমে যাওয়ায় এবার বিক্রি যেমন বাড়বে, তেমনি ভালো মুনাফার আশা করছেন ফুলচাষিরা। তবে অজ্ঞাত এক ভাইরাস অনেক চাষির দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। তাদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের তৎপরতা নেই।
বিরুলিয়া ইউনিয়নজুড়েই এখন ফুলের বাগান। বিশেষত শ্যামপুর গ্রামটি হারাতে বসেছে তার নিজের নাম। শ্যামপুর গ্রাম ছাপিয়ে গোলাপ গ্রাম নামেই এখন খ্যাত দেশ-বিদেশে। সে গোলাপ গ্রামেও যেন ব্যস্ততার শেষ নেই ফুলচাষিদের। কেউ পরিচর্যায় ব্যস্ত, কেউবা ব্যস্ত হিসাব-নিকাশে। যেকোনোভাবে আর কদিন ফুল বাগানে রাখা গেলেই বাড়তি লাভ। তবে কাঁচামাল হিসেবে বাগানে বেশিদিন ফুল রাখার মতো সুযোগ না থাকায় কিছুটা কম দামের আশায় পাইকারদেরও আনাগোনা বেড়েছে বিরুলিয়ায়।
ফুলের ভরা মৌসুমে চাষিদের বাগানে শোভা পাচ্ছে বাহারি রঙের গোলাপ, হরেক রকম জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রজনীগন্ধাসহ নানা জাতের ফুল। পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ব্যস্ততার শেষ নেই ফুলচাষিদের।
করোনার কারণে গত দুই বছর টানা লোকসান গুনতে হয়েছে এখানকার ফুলচাষিদের। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড়েও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারপরও নতুন দিনের আশায় চাষিরা আবার ফিরেছেন ফুলচাষে।
শ্যামপুরের ফুলচাষি জালাল উদ্দিন জানান, এবার বাজার ভালো। ডলার সংকটসহ নানা কারণে তাজা ফুল ও কৃত্রিম ফুলের আমদানি কমে যাওয়ায় বিক্রি ও মুনাফার সম্ভাবনা বাড়ছে। বিদ্যুৎ, ডিজেলসহ নানা উপকরণের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে ফুলের দামও। সব মিলিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।
বর্তমানে একটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা, জারবেরা ১০ থেকে ২০ টাকা, রজনীগন্ধা ১০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ৫ টাকা, গ্লাডিওলাস ১২ থেকে ১৫ টাকা। চাষিদের আশা সামনের তিনটি দিবসে ফুলের দাম আরও বাড়বে।
এদিকে সম্ভাবনার মাঝেও চোখ রাঙাচ্ছে অজ্ঞাত ভাইরাস। সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের বেশকিছু গোলাপ বাগান আক্রান্ত হয়েছে অজানা রোগে। কলি আসার পরেই ঝরে পড়ছে, শুকিয়ে মরে যাচ্ছে গাছের ডালপালা। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ নিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।
বাগ্মীবাড়ি গ্রামের ফুলচাষি হুমায়ূন কবির জানান, ভাইরাসের ব্যাপারে কৃষি বিভাগের কোনো তৎপরতা নেই। একই অভিযোগ ফুলচাষি মোক্তার মিয়া, আলমাস উদ্দিন ও মামুন মিয়ার। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে চাষিরা সর্বস্বান্ত হবেন এমন আশঙ্কা ফুলচাষিদের কণ্ঠে।
ফুলচাষি সোলায়মান দেড় লাখ টাকা ঋণ করে টানা ৯ মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে এক বিঘা জমিতে গড়েছেন গোলাপের নতুন বাগান। এখন কলি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কালশিটে দাগ পড়ছে। বাগানেই ঝরে পড়ছে ফুল। তিনি জানান, ২০১৭ সালেও এরকম রোগ হয়েছিল। কৃষি কর্মকর্তারা তখনো কোনো প্রতিকার করতে পারেননি।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজিয়াত আহমেদ বলেন, শীত-বৃষ্টির পাশাপাশি ছত্রাকের আক্রমণে গাছ মাটি থেকে খাবার নিতে পারছে না। আমরা ওষুধ দিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।
বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম মণ্ডল জানান, ইউনিয়নে পাঁচ শতাধিক ফুলচাষি রয়েছেন। সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষিরা মাত্র তিন থেকে চার দিন ফুলের ন্যায্যমূল্য পান। অন্য দিনগুলোতে তাদের পানির দামে ফুল বিক্রি করে দিতে হয়। এ অবস্থার অবসান জরুরি।