প্রতিযোগিতার দৌড়ে শিক্ষার্থীরা

Slider শিক্ষা


এ বছর নটর ডেম কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সৈয়দ আহমদের প্রথম পছন্দ মেডিক্যাল কলেজ অথবা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। তার বন্ধু রেজওয়ান মনে করেন, দেশে অনেকগুলো প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ে ভালো পড়ালেখা হলেও তাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই ভালো। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান মতিঝিল আডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুলতানা নিম্মি। তার সহপাঠী ছন্দা মনে করেন, সরকারি কলেজগুলোয় ভালো লেখাপড়া হয় না, ঢাকার সাত কলেজ এখন অনেক সমস্যায় জর্জরিত। তার লক্ষ্য মেডিক্যাল কলেজ।

সদ্য এইচএসসি পাস করা এসব শিক্ষার্থীর মন্তব্য মনে করিয়ে দেয় খ্যাতনামা পাবলিক, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির তীব্র প্রতিযোগিতার কথা। দেশে উচ্চ শিক্ষার ভর্তিতে আসন সংকট নেই, তবে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেতে শিক্ষার্থীরা এখন ছুটছেন কোচিং সেন্টারগুলোয়।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাস করা মেয়ে আখলিমাকে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়াতে চান তার মা তানজিলা। এ কারণে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই একটি কোচিং সেন্টারে মেয়েকে পড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, কোচিং না করিয়ে উপায় নেই। অন্তত ধারণা পাওয়া যায় কী ধরনের প্রশ্ন হয়, কোন কোন বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়। তার মতে, কোনো কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভালো করছে, তবে খরচ বেশি।

আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোকলেছুর রহমানের অভিযোগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরজুড়ে মারামারি, হানাহানি, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব; আবার শিক্ষক আন্দোলনে ব্যাহত হয় লেখাপড়া। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় হয়; কিন্তু লেখাপড়ার মান প্রশ্নবিদ্ধ। মেয়েকে কোনো সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ইচ্ছা তার।

গত বুধবার প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক ফলে মোট পাস করেছেন ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন পরীক্ষার্থী। আর বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য বলছে, দেশে উচ্চ শিক্ষাস্তরের প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ১৪ লাখ ১৮ হাজার। এই হিসাবে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি শেষে অন্তত ৪ লাখের বেশি আসন শূন্য থাকবে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আমিরুল মোমেনের বাবা-মায়ের ইচ্ছা, সন্তান বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা নেবে। তার বাবা মো. আসলামুল হক বলেন, দেশে চাকরির নিশ্চয়তা নেই। বিদেশে লেখাপড়া করলে চাকরির জন্য আর ঘুরতে হয় না। এই কারণেই সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা বিদেশে চলে যায় বলে মনে করেন তিনি।

দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য কোনো আসন সংকট নেই বলে নিশ্চিত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত বুধবার বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউট মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী আসন সংকটে ভর্তি বঞ্চিত থাকবে না। সরকারি ও বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি শেষে অনেক আসন শূন্য থাকে। তবে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সব সময় বেশি প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই লেখাপড়ার মান বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করছি।’

শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একটা দেশে কত লোক আসলে অনার্স-মাস্টার্স করবে, এটাও আমাদের ভাবতে হবে। উচ্চ শিক্ষা কি সবাই করবেন? নিশ্চয়ই উচ্চ মাধ্যমিকের পর আরও কিছু পড়তে চাইবেন।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে যত বেশি দেশ উন্নত, সেখানে তত বেশি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা যায়। আমাদের এখানে একটা মাইন্ড সেট আছে, সেখানে নেই।’

ইউজিসির তথ্য বলছে, দেশের ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ হাজার আসন আছে। এ ছাড়া ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৭৫, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাস ও স্নাতকে ১০ লাখ ৯৩ লাখ ৮১১, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফাজিল ও অনার্স মাদ্রাসায় ৬০ হাজার আসন আছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা নির্ধারিত নেই। তবে সর্বশেষ ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় গত বছর। দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৪০৪, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০ আসন আছে। ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ৬শ, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিকাল কলেজে ৬৫৪, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৩ হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন আছে। সব মিলে মোট আসন সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *