ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাতীয় পার্টির নেতা যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে হত্যা-গণহত্যাসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রোববার (১৪ জুন) তদন্ত সংস্থার কার্যালয় রাজধানীর ধানমণ্ডি সেফহোমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা। সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) আবদুর রাজ্জাক খান প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
একই মামলার আসামি যশোরের কেশবপুরের ওই ১২ জনের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেনসহ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন চারজন। গ্রেফতারকৃত অন্য তিনজন হচ্ছেন মো. বিল্লাল হোসেন, মো. আকরাম হোসেন ও ওজিয়ার মোড়ল।
পলাতক বাকি আসামিরা হলেন- মো. ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, মো. আব্দুল আজিম সরদার, মো. আজিম সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মো. লুৎফর মোড়ল, মো. আব্দুল খালেক মোড়ল এবং মশিয়ার রহমান।
ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও এ আটজন এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় তাদেরকে আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে এ মামলায় তদন্ত শুরু করে শনিবার (১৩ জুন) শেষ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান।
সাখাওয়াতসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ২০০৯ সালে যশোরে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। ওই বছর জুন মাসে তাকে কেশবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে আত্মগোপন করেন।
পরে ওইসব মামলা ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ১ এপ্রিল সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করার জন্য নথিভুক্ত হয়।
প্রসিকিউশনের আবেদনে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ২৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরখান থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
গত ২২ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের আদেশে ধানমণ্ডির সেফহোমে গ্রেফতারকৃত সাখাওয়াতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত সংস্থা।
এদিকে সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে একই অপরাধে আরও ১১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে এ মামলায় মোট আসামি হন ১২ জন। প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ১২ মে বাকি ১১ জনের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ওইদিন রাতেই তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করার পর ১৩ মে হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১ জুন পলাতক আটজনকে গ্রেফতারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
সাখাওয়াতসহ ১২ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় কেশবপুরের চিংড়া, বগা, ভাণ্ডারখোলা, নেহালপুর, হিজলডাঙ্গা, গৌরীঘোনা ও ভাল্লুকঘরসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন তারা। সাখাওয়াত কেশবপুরের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ও অন্যরা এ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনে এলাকার সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগে বাধ্য হন।
সাখাওয়াত ১৯৯১ সালে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে জামায়াতের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাবস্থায়ই তিনি জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন তিনি। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে নির্বাচন করে পরাজিত হন সাখাওয়াত।
এরপর ২০০১ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। পরে বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। এরপর এলডিপি ও পিডিপি হয়ে তিনি এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।