হিরো আলম ঝড় রাজনীতিতে

Slider বিচিত্র


আশরাফুল আলম সাঈদ, যিনি হিরো আলম নামেই পরিচিত। বেসুরো একজন গায়ক বা মডেল থেকে আলোচনায় আসা হিরো আলম এখন রাজনীতিতেও বেশ আলোচিত। সম্প্রতি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিরো আলমই এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সোশ্যাল মিডিয়া, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা রাজনৈতিক মঞ্চ, সবখানেই আলোচনার বিষয় তিনি। তাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও। তাকে দিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচনী ব্যবস্থার মান ঠিক করছে প্রধান দুই দল।

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া জাতীয় সংসদের ছয়টি আসনে উপনির্বাচন হয় গত বুধবার। উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুটি আসনে অংশ নিয়ে বগুড়া-৪ আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন হিরো আলম। শেষ পর্যন্ত ওই আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জাসদ নেতা একেএম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি।

নির্বাচনে হারার পর হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোটের ফলাফলে কারচুপি করে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বিজয় ছিনতাই করা হয়েছে। তার সঙ্গে কেন এমন ঘটতে পারে, সেটিও নিজের বিবেচনামতো স্পষ্ট করেই বলেছিলেন ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফল ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষিত সমাজের কিছু লোক আছেন, যারা আমাকে মেনে নিতে চান না। তারা মনে করেন, আমি পাস করলে বাংলাদেশের সম্মান যাবে, তাদের সম্মান যাবে। আমরা এত শিক্ষিত, হিরো আলমের মতো মূর্খকে স্যার বলে ডাকতে হবে। এ জন্য তারা আমাকে মানতে চান না। তারা আমার বিজয় মেনে নিতে পারেননি। নির্বাচন নিয়ে এ রকম প্রহসন হলে, কারচুপি হলে মানুষ নির্বাচন ভুলে যাবে।’

হিরো আলমের এমন বক্তব্যের পরপরই যেন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। নির্বাচন নিয়ে হিরো আলমের এমন অভিযোগের মুখে তার নির্বাচনী ফল নিয়ে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক জাতীয় নেতা। ফখরুলের বক্তব্য দেওয়ার তিন ঘণ্টার ব্যবধানে হিরো আলমের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দুই জাতীয় নেতার বক্তব্য দেওয়ার পরপরই নিজের ভ্যারিফায়েড পেজে লাইভে কথা বলেন হিরো আলমও।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং তাদের অধীনে সুষ্ঠু ভোট যে সম্ভব নয়, তা ব্যাখ্যা করার জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টেনে এনেছেন হিরো আলমকে। গত শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে হিরো আলম হিরো হয়েছে একটি মাত্র কারণে। সে প্রমাণ করেছে, এই আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকারকে টিকতে হয়। তিনি বলেন, যারা নির্বাচিত নয়, যারা বারবার বাংলাদেশের মানুষকে প্রতারিত করেছে, বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় জোর করে টিকে থেকেছে, তাদের অধীনে কখনো কোনো নির্বাচন হতে পারে না।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, জাতীয় সংসদকে খাটো করতে বিএনপি হিরো আলমকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল। শনিবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে দলের এক সমাবেশে তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব বললেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে হারানো হয়েছে। হায়রে মায়া! হিরো আলমের জন্য এত দরদ উঠল তার। তিনি ভেবেছিলেন, হিরো আলম জিতে যাবে। কিন্তু হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। হিরো আলমকে বিএনপি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। তারা সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের বিষয়ে পরে নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হিরো আলম। বিএনপির মহাসচিব যে বক্তব্য দিয়েছেনÑ সেই প্রসঙ্গ তুলে হিরো আলম বলেন, ‘মির্জা আলমগীর বলেন, এই সরকার এখন অসহায় হয়ে গেছে। এই সরকার অসহায় হয়েছে কি না, আমি জানি না। তবে আমি হিরো আলম যে অসহায় হয়েছি, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে?’

অন্যদিকে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘আমি যদি পার্লামেন্টে গেলে পার্লামেন্ট ছোট করা হয়, তবে যখন মনোনয়ন কিনছি, তখন কিন্তু আপনাদের বলা উচিত ছিল, হিরো আলমের কাছে যেন মনোনয়ন বিক্রি করা না হয়। আপনারাই বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশ, সবাই নির্বাচন করতে পারবে। সবার যদি নির্বাচন করার কথা আইনে থাকে, তাহলে আমি ভোটে দাঁড়ালে সংসদ ছোট হবে কেন? তা হলে সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে আইন করতে হবে?’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হিরো আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের সবার বিচার তো আপনি করেন। আমি আপনার কাছে বিচার দিলাম। আমার ভোট সুষ্ঠুমতো হলো, কিন্তু ভোটের ফল সুষ্ঠুমতো রায় দেওয়া হলো না কেন? এর বিচার চাই।’

হিরো আলম নির্বাচনে হেরেও ঘুরে ঘুরে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। এ ছাড়া গতকাল রবিবার দুপুরে হিরো আলম বগুড়া-৪ আসনের ৪৫টি কেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনার জন্য বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের কাছে আবেদন জমা দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বলেন, ‘যেখানে মিথ্যা কথা বলে আমার ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে, সেই বগুড়া-৪ আসনের ভোটে আসুন, আমার সঙ্গে ভোট করে দেখুন। আপনি দল থেকে দাঁড়াবেন, আমি স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হব। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকবে। ভোটারদের ভয় দেখানো হবে না। সুষ্ঠু ভোট দিয়ে দেখুন তো দেখি, খেলা হয় কি না?’

হিরো আলম বলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে সংসদ ছোট হবে, সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর বক্তব্যের পর নিশ্চিত হয়েছি, নির্বাচন কমিশন চাপে পড়ে পরিকল্পিতভাবে ফল পাল্টে দিয়েছে। তবু ন্যায়বিচার পেতে ফল পুনর্গণনার আবেদন করেছি। নির্বাচন কমিশনে ন্যায়বিচার না পেলে হাইকোর্টে যাব। ফল বাতিল চেয়ে রিট করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *