প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সবাই বিনিয়োগ করলে নিজেরাও লাভবান হবেন, আবার দেশটাও লাভবান হবে।
আজ সকালে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনির্মিত ‘বিনিয়োগ ভবন’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ করে সারাদেশে গড়ে ওঠা এক শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বহুতল বিনিয়োগ ভবনটি তিনটি সংস্থা-বিডা, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) এর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছরে আপনাদের ব্যবাসায়ীবান্ধব পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা ব্যবসা করেন এখন আর ওই হাওয়া ভবনের পাওয়াও দিতে হয় না। কোনো কিছুই করতে হয় না, সেই পরিবেশ আমরা তৈরি করে দিয়েছি। আর আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য একদম তৃণমূলের মানুষ। তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে আমাদের নিজস্ব বাজার হচ্ছে, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমাদের আশেপাশের যে দেশগুলো রয়েছে, তাদের সাথেও আমরা যোগাযোগ স্থাপন করছি।
তিনি বলেন, ভুটান, নেপাল, ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার সর্বক্ষেত্রেই চমৎকার একটি যোগাযোগের জায়গা। তাছাড়া এই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় তিন শ’ কোটি মানুষের বাজার, এই সুবিধাটা যে কেউ নিতে পারেন। তাছাড়া আমরা কক্সবাজারে অন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট করে দিচ্ছি, ঢাকার সাথে সরাসরি রেললাইন করা হয়েছে, আমরা সড়কের উন্নয়ন করেছি। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় যে ইস্ট এবং ওয়েষ্টের মধ্যে একটা ব্রিজ হতে পার বাংলাদেশ। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। আমরা মনে করি আমাদের ভৌগলিক যে অবস্থান সেটাও অত্যন্ত অনুকূলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়িতে ইতোমধ্যে ডিপসী পোর্ট কার্যক্রম শুরু করেছে, পায়রা পোর্টের উন্নতি হচ্ছে, মোংলা পোর্টকে আমরা উন্নত করছি, বে টার্মিনালসহ আরো অনেক সুবিধা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটুকু বলবো সবাই বিনিয়োগ করুন এতে নিজেরাও লাভবান হবেন আবার আমার দেশটাও লাভবান হবে। আমাদের রফতানি বাস্কেট বাড়াতে হবে। কিছু নতুন নতুন পণ্য এবং বাজার আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সেটাই হচ্ছে সবথেকে বড় কথা, কাজেই দেশী বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশ আরো উন্নত হোক, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা চাই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে দিয়েছি এবং তারই ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনাও আমরা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘এখানেই আমরা থেমে না থেকে ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে সেজন্য ডেল্টা পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়েছি। কাজেই বাংলাদেশের এই অগগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে সেটাই আমরা আশাকরি। কাজেই আমাদের যারা ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত, আমি তাদের বলবো আপনারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করবেন যাতে এই বাংলাদেশটাকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। শুধু সোনার বাংলাদেশই নয়, ক্ষুধা, দারিদ্র মুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে আমাদের জনগোষ্ঠী হবে স্মার্ট, অর্থনীতি হবে স্মার্ট, ব্যবসা-বাণিজ্য হবে স্মার্ট-সবই আমরা ডিজিটার সিষ্টেমে করব। আর একটি বিষয় হচ্ছে আমরা হাইটেক পার্ক করে দিচ্ছি, ইনকিউবেশন সেন্টার করে দিচ্ছি, সব জায়গায় ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে।
তিনি বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি বলেন, এত বিপুল পরিমান ভর্তুকি দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ইংল্যান্ড দেড় শ’ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এটা সবার মনে রাখতে হবে। আমরা কিন্তু সেই পর্যায়ে যাইনি। গ্যাস-বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে ক্রয়মূল্যে। আর কত ভর্তুকি দেওয়া যায়। আর এ ক্ষেত্রে কেন দেবো। আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে।
এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২ টাকা খরচ হয় উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ৬ টাকা। তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয়া যাবে যদি সবাই ক্রয়মূল্য যা হবে সেটা দিতে রাজি থাকে। তাহলে দেয়া যাবে। তাছাড়া আর কত ভর্তুকি দেয়া যায়।’
তিনি বলেন, আমরা করোনা মোকাবিলা করতে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা চালু থাকে। প্রণোদনা দেয়ার ফলেই অর্থনীতির গতিটা সচল রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পোঁছে দেয়ার। আমরা পৌঁছে দিয়েছি। জেনারেটরের ওপর যে ট্যাক্স ছিল, সেই ট্যাক্স আমি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। শিল্প-কলকারখানায় যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। কারো সহযোগিতা বা সমর্থন পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু সমর্থন আমার জনগণ দিয়েছে। ফলে আমরা সফলতার সাথে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করে দিয়েছেন। সিলেট বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করে দিয়েছেন। মেট্রোরেল, পাতালরেলসহ বাংলাদেশের জন্য যা যা দরকার এক এক করে সব করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
সরকার প্রধান আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশ এখন ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বাধীনতার পরে এ পর্যায়ে আসতে পারবে কেউ ভাবতে পারেনি।
সূত্র : বাসস