মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি ঃঃ-উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয় বগুড়াকে। করতোয়া-নাগর-যমুনা-বাঙ্গালী নদী-বিধৌত উত্তরাঞ্চলের শিল্প রাজধানী খ্যাত এই জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য অনেক পুরনো। বগুড়া ছিল প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী, যা বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। বিগত দেড় দশকে দেশজুড়ে যে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে, তার ছোঁয়া লেগেছে বগুড়ায়ও। এরই মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির কাজ যেমন সম্পন্ন হয়েছে, তেমনি এখনো চলমান বেশ কিছু প্রকল্প।
সড়ক ও যোগাযোগ : বগুড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ জানান, জেলায় এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে অনেকগুলো উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বেশ কিছু কাজ চলমান। বগুড়া-নাটোর, বগুড়া-ক্ষেতলাল, মোকামতলা-গুজিয়া-আমতলী সড়কসহ মোট ১৮টি রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। গ্রামীণ সড়কগুলো সংস্কার ও মেরামতের জন্য জেলায় তিনটি প্রকল্প চলমান।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে দুটি প্রকল্পের কাজ চলমান। বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়কে সাতটি সেতু নির্মাণ এবং তিনটি বেইলি সেতু প্রতিস্থাপন ও একটি ক্ষতিগ্রস্ত আরসিসি সেতু পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। শেরপুর-সিরাজগঞ্জ সড়কে বথুয়াবাড়ী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন রাস্তায় সেতু নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছে। বগুড়া-সারিয়াকান্দি মহাসড়ক উন্নয়ন ও বাঙ্গালী নদীর ওপর আড়িয়াঘাট সেতুর নির্মাণকাজ চলমান। জেলাজুড়েই নদী ও খালের ওপর ছোট ও মাঝারি আকারের সেতু নির্মিত হচ্ছে বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
স্বাস্থ্য : বগুড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ জানায়, সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং শহরে ওয়াটার পাইপ লাইন, ডিস্ট্রিবিউশন ওয়েল, পাম্প হাউস, নলকূপ, পাবলিক টয়লেট, ওয়াশ ব্লক ও ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
কৃষি : কৃষকদের কৃষিবিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধি ও পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শেরপুর উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ-সার সহায়তার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে বীজ, চারা ও সার সরবরাহ এবং প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
অবকাঠামো : জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি সূত্র জানায়, জনগণের চলাচল, কৃষিজাত পণ্য পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য জেলায় বিভিন্ন রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছে। পাশাপাশি চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান। বগুড়ার আদমদীঘি, কাহালু, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ ও শাজাহানপুর উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। বগুড়া সদর, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া, কাহালু ও গাবতলী উপজেলা ভূমি অফিস এবং সোনারায় ও নিমগাছি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা : বগুড়ায় ১৩টি মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যার মধ্যে চারটি মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্য ৯টির নির্মাণকাজ চলমান। বগুড়া সদরসহ ১২টি উপজেলায় একটি করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ চলমান। ধুনট, শেরপুর, শাজাহানপুরসহ ৯টি এলডিডিপি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিশোর-কিশোরীর মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে।
পানি ব্যবস্থাপনা : ‘টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’ ও ‘সেচ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ’ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খাল খনন ও পুনঃখনন কাজ চলমান। যমুনা নদীর ডান তীর (পশ্চিম পাশ) সংরক্ষণের জন্য তিনটি প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জেলায় মহাসড়ক, সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট যেমন উন্নয়ন ও সংস্কার হচ্ছে; একইভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নেও বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান। একসময়ের শিল্পনগরী খ্যাত বগুড়ার অতীত ঐতিহ্যকে ফেরাতে সরকারিভাবে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী সংস্কারসহ এই নদীকেন্দ্রিক একটি উন্নয়ন পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। বগুড়ার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগে পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ চলমান বলেও তিনি জানান।