শ্রীপুর (গাজীপুর): বিপত্নীক রাশিনা আক্তার (৫০)। ছিল কেবল এক খণ্ড জমি। সেটিই বিক্রি করে পেয়েছিলেন ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সেই টাকাও নিজের কাছে রাখতে পারেননি তিনি। খালা ডেকে সরলতার সুযোগে প্রতিবেশী সোলেমান তার সেই টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। তাইতো উপায় না দেখে দুই হাতে টাকার মতো সাজানো কাগজের বান্ডিলগুলো ধরে হাউমাউ করে কাঁদছেন তিনি।
এ সময় টাকার শোকে পাগলপ্রায় রাশিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘মা ডাইকা কি করলি সোলেমান, আমার টাহা (টাকা) কি করলি? আমার টাহা দে, কই ছিলাম তুই জাইছ না, গেলে আর আইবি না। সোলেমান আমারে মা-খালা ডাইকা সব শেষ কইরা দিছে।’
রাশিনা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের শৈলাট গ্রামের মৃত আদম আলী ফকিরের স্ত্রী। আর অভিযুক্ত সোলেমান উপজেলার শৈলাট গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি এলাকায় সোলেমান কবিরাজ নামে পরিচিত। এ ঘটনায় সোলেমানের বিরুদ্ধে শ্রীপুর মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন রাশিনা আক্তার।
ভুক্তভোগী জানান, সোলেমান তার প্রতিবেশী। মা-খালা বলে ডাকতো তাকে। বাড়িতে আসা-যাওয়াও ছিল। সোলেমানকে ছেলের মতোই বিশ্বাস করতেন। সে তাকে ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় জমি বিক্রি করে দিয়েছিল। টাকার বিষয়টি জানা ছিল কেবল তার। টাকা হাতিয়ে নিতে সোলেমান তার বিশ্বাস আর সরলতার সুযোগ নেয় বলে অভিযোগ রাশিনার।
তিনি বলেন, ‘গত শনিবার সোলেমান একটি ব্যাগ নিয়ে আমার বাড়িতে আসে। কি যেন সমস্যা। বাড়ি যেতে পারবে না। তাই রাতে আমার বাড়িতে থাকতে চায়। একটি ব্যাগ রাখতে দিয়ে বলে এতে টাকা আছে। টাকা ভেবেই ব্যাগটি সুকেজের ড্রয়ারে রেখে দেই। সোলেমানের রাখা ব্যাগে ছিল টাকার মতো সাজানো সব কাগজের বান্ডিল। কৌশলে সোলেমান ব্যাগ বদল করে সাড়ে ৮ লাখ টাকা নিয়ে যায়।’
‘পরে আমি সোলেমানকে টাকা নেওয়ার কথা জিজ্ঞেস করি। সে ৫০ হাজার টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দেবে বলে জানায়। এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলতেও বারণ করে। এক পর্যায়ে সোলেমান টাকার কথা অস্বীকার করে। আমি টাকা উদ্ধার করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন পথ পাচ্ছি না,’ বলেন রাশিনা বেগম।
এদিকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সোলেমান বলেন, ‘আমি তাকে খালা বলে ডাকি। তাদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমি তাকে ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার জমি বিক্রি করে দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।’
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘রাশিনা খুব অসহায় নারী। আমার কাছে বিচারের জন্য এসেছিল। অনেক টাকার ব্যাপার। তাকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাওনা চকপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মিন্টু মোল্লা বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। অভিযুক্ত সোলেমানকে পাওয়া যায়নি। দুই পক্ষের লোকজনকে থানায় আসতে বলেছি। উভয় পক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’