বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু একদিন আগে বাংলাদেশ সফর করেছেন। তিনিও তুলে গেছেন- এদেশে গণতন্ত্র নেই, অতীতের নির্বাচনগুলো হয়নি। আগামী দিনে তারা সত্যিকারভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন চান। কেন আমেরিকা থেকে এসে বলতে হবে? এজন্য যে এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য। এদেশের ভোটের ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
আজ সোমবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ দফা দাবি আদায় ও বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। আবার বলেছে, মাসে মাসে নাকি বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করবে। শুধুমাত্র পাঁচ শতাংশ নয়; ভবিষ্যতে আরও তারা বৃদ্ধি করবে। আপনারা জানেন, ২০০৬ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে সরকার ছিল, তখন বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি সর্বোচ্চ দর ছিল ছিল ২ টাকা ৬০ পয়সা; এখন তা ১১ টাকার বেশি।’
এ সময় যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ড. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সব প্রকার আন্দোলন করেছি। এই সরকারকে বিদায় করতে আগামীতেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করব। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হচ্ছে আগামী ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে দুর্নীতিবাজ, গণতন্ত্র হত্যাকারী, গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশের আহ্বান জানাচ্ছি।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘শত চেষ্টা করলেও সরকারকে কেউ রাখতে পারবে না। পদে পদে শুধু ব্যর্থ নয়; এই সরকার ফ্যাসিস্ট, অত্যাচারী ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। গুম, খুন করে দমিয়ে রাখা যাবে না। সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, রুখে দাঁড়াবে ‘
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, ‘নেতাকর্মীদের গায়ে হাত আসলে, পাল্টা হাত তুলতে হবে। শুধুমাত্র আমাদের মার খাওয়ার জন্য জন্ম হয়নি। অন্যায়কারীদের গায়ে হাত তোলা নৈতিক দায়িত্ব।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘হাত চালানোর আগে সাবধানে চালাবেন। আমরাও হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। আমরা আমাদের দাবি আদায় করব।’
বিএনপিঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সংবিধানে আমরা আমরা জনগণের গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা ফিরিয়ে আনব। ষাট বছরের রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলন, সংগ্রাম ও যুদ্ধ সবই করেছি। সরকার আর রাষ্ট্র এক কথা নয়। সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রদ্রোহী নয়। সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার অধিকার আমার আছে। ৭২ সালের সংবিধান কেন ৭৪ সালে সংশোধন করা হয়েছিল?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না গেলে ২০১৪ সালের মতো প্রার্থী পাওয়া যায় না, ১৫৩ জন বিনাভোটে নির্বাচিত হয়। আর বিএনপি যদি অংশগ্রহণ করে একবেলা ভোট হলেও তারা জিতবে না, সেই ভয়ে আগের রাতে তারা ভোট কেটে নেয়। এই তো সরকার। তারা গৌরব করে, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশালের নামে এই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে জবাই করেছিল। এরশাদের সামরিক শাসনকে তারা সমর্থন জানিয়েছে। ১/১১-এর সরকারকে বলেছে, তাদের আন্দোলনের ফসল। সব অগণতান্ত্রিক কাজ এই সরকার করেছে আর এরা সমর্থন করেছে। তারা কোনো দিন গণতান্ত্রিক হতে পারে না।’
বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা শহীদ জিয়া একদলীয় স্বৈরাশাসনের গোরস্তানের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাগান রচনা করেছেন। খালেদা জিয়া এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নয় মাস লড়াই করে আবার সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। আবার বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের ওপর আবার বিএনপি গণতন্ত্রের বাগান রচনা করবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে। এই বিএনপির তরুণ, ছাত্র, যুবক, শ্রমিকসহ দেশের মেহনতি নারী-পুরুষরা। অতীতে আমরা পেরেছি, ভবিষ্যতেও পারব। ’
দলটির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। দেশের মানুষের বিশাল অংশ দুই বেলা খাবার যোগান হচ্ছে না। আজকে বিভিন্নভাবে উচ্চ দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উচ্চমূল্য ও উচ্চ ট্যাক্সের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দেশের সাধারণ মানুষের পকেট খালি করা হচ্ছে। এই টাকা ভোট চোরদের পকেটে যাচ্ছে। ভোট চোরেরা দেশের অর্থনীতি চুরি করে ফেলেছে, দেশের অর্থনীতি ভোট চোরদের হাতে। তারা দেশের তহবিল চুরি করেছে। তারা ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বানিয়ে দেশের মানুষের অর্থ চুরি করে।’
আমির খসরু বলেন, ‘দেশের দশ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এ কারণে দেশের রিজার্ভ শূণ্যের কোঠার দিকে যাচ্ছে। আজকের বাংলাদেশের মোট অর্থের এক শতাংশের কম মানুষের হাতে। বাকি টাকা ভোট চোরদের পকেটে যাচ্ছে। এই টাকা তারা বিদেশে পাচার করছে। দুবাই, লন্ডন, কানাডাসহ সারা বিশ্বে তাদের সম্পদের হিসাব বের হচ্ছে। এই লুটপাট আর চলতে দেওয়া যাবে না ‘
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।