বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। আগামী দিনের লড়াইয়ে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এ সময় তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করলেই ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না।
সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করলেই আন্দোলনে জয়ী হওয়া যায় না, ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। তারা (আওয়ামী লীগ) জানে এটা। জানার পরেও তারা একই ভুল করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে ছিলাম, আক্ষেপটা বোধ হয় তাদেরই বেশি। কী ভেবে, কী চিন্তা করে, কী আশা নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলাম। আর কি পেয়েছি। কত রঙ, কত রকমের কথা শুনেছিলাম আমরা, বাংলাদেশ সোনার বাংলা হবে। বাংলাদেশকে কত কী করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করা হবে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ করা হবে শুনেছি। যে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখেছি, অনাচার দেখেছি, অব্যবস্থাপনা দেখেছি। শেষ পর্যন্ত সেদেশে গণতন্ত্রহীনতা দেখেছি। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা দেখেছি। এগুলোর কোনোটাও সোনার মতো মূল্যবান না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বলা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করেছে, তারাই এখন গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন বলে দাবি করে। তখন কষ্ট হয়। গণতন্ত্র তো ক্ষমতায় যাওয়ার বাহন না। গণতন্ত্রের বাহন হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। আপনারা সেই নির্বাচন ধ্বংস করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলবেন, এইটা বলতে পারেন না।’
বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আমাদের এত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে; মাত্র তিন মাসের মধ্যে আমাদের ১২-১৩ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও আমাদের প্রত্যেকটা প্রোগ্রাম সফল হয়েছে। প্রত্যেকটা আন্দোলনে সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। আর সাধারণ জনগণ তখনি অংশগ্রহণ করে, যখন তারা পরিবর্তন চায়। পরিবর্তন চায় কল্যাণের জন্য, সমৃদ্ধির জন্য, শান্তির জন্য। এবং জনগণের শান্তি, কল্যাণ এবং সমৃদ্ধির যে আকাঙ্ক্ষা যুগে যুগে কেউ কখনো তা দাবিয়ে রাখতে পারেনি। এই সরকারও পারবে না। আগামী দিনের সেই লড়াইয়ে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী। এ সময় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা, এনডিপির চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের, জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন একরাম, ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, মুসলিম লীগের মহাসচিব মো: নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ শাহ আলম, মুক্তার আহমেদ প্রমুখ।
সম্মেলনে শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ও নজরুল ইসলামকে মহাসচিব ঘোষণা করা হয়।