প্রতিবেদক : ‘এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
হোটেল সোনারগাঁওয়ে রবিবার বিকাল ৪টা থেকে ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত খালেদা জিয়া ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান গণমাধ্যমের কাছে ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ জানান, নরেন্দ্র মোদি ও খালেদা জিয়ার মধ্যে ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক হয়েছে।
ড. মঈন খান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও খালেদা জিয়ার মধ্যে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। এতে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে কথা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সার্ককে কিভাবে আরও শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়েছে তা হল, আমাদের দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। একটি বিতর্কিত ও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমরা বলেছি, বিশ্বপরিমণ্ডলে শুধু নিজেরাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলে হবে না। প্রতিবেশী দেশে গণতন্ত্র না থাকলে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত থাকলে তা বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশের জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে বাংলাদেশে যে সরকার আছে, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার কোটি কোটি মানুষের জন্য কাজ করতে পারবে না।
ড. মঈন খান বলেন, ‘এ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার। ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে পারিনি। এ দেশের নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন সবকিছু সরকারের হুকুমে চলে। এ সব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের পারস্পরিক বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, কোনো সরকারই স্থায়ী নয়, দেশের জনগণ স্থায়ী। তাই দুই দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছি।’
মঈন খান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বলেছি। গণতন্ত্র উপস্থিত নেই, সেটা বলেছি। গণতন্ত্র ব্যতিরেকে উন্নয়ন হতে পারে না। গণতন্ত্রকে ভিত্তি করেই উন্নয়ন হতে হবে। যতই বলা হয়, আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র, এটা ঠিক নয়।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভারতে যেভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি যেভাবে তৃণমৃল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, সেটি সম্ভব হয়েছে শুধু গণতন্ত্রের কারণে। কাজেই এটি অত্যন্ত স্পষ্ট, শুধু দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল নয়, বিশ্বে কোথাও গণতন্ত্র ব্যতিরেকে কোনো মানুষের কল্যাণ হতে পারে না।’
মঈন খান জানান, তার দল সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার যেভাবে উন্নয়নের কথা বলছে, সেই উন্নয়ন অর্থহীন যদি সেখানে ট্রান্সপারেন্সি ও এ্যাকান্টিবিলিটি না থাকে, তাহলে সেই উন্নয়ন সত্যিকার অর্থে কোটি মানুষের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
তিনি বলেন, আমরা একটি গ্লোবাল ভিলেজে বাস করি। কাজেই নিজের পরিমণ্ডলে আমি শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকব, অন্য কেউ সমস্যা সৃষ্টি করবে না, এটি হতে পারে না। কাজেই আজকে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি অর্থাৎ বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার, দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত হাজার হাজার কর্মীদের ওপর অত্যাচার অনাচার করা হচ্ছে। এর মূল কারণ এখানে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি। বিষয়টি আলোচনায় আপনা-আপনি উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে যুব সমাজ, তরুণ সমাজের কথা বলেছি।’
বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ জানান, নরেন্দ্র মোদি ও খালেদা জিয়ার মধ্যে ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক হয়েছে। মোট ৪৫ মিনিটের বৈঠকের ৩০ মিনিট ছিল দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক। পরবর্তী ১৫ মিনিট দুই নেতার মধ্যে একান্ত বৈঠক হয়।
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিকেলে মোদি-খালেদার বৈঠক হয়। বিকেল চারটায় এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।
৩৬ ঘণ্টার সফরে শনিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গেও দ্বি-পাক্ষিক ইস্যুতে বৈঠক করেন। রবিবার রাতে মোদি দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।