পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের এলাকায় (বাঘা-চারঘাট)স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে একের পর এক পরাজয় ঘটছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের। তবে পাস করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এতে বিদ্রোহীদের কাছে ধরাশায়ী হচ্ছেন নৌকার প্রার্থীরা। এমন কি প্রতিমন্ত্রীর নিজ ভোটকেন্দ্রেও শোচনীয় পরাজয় হয়েছে নৌকার। এর পেছনে প্রার্থী নির্বাচনে শাহরিয়ার আলমকে দায়ী করছেন দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতারা। তারা বলছেন, প্রার্থী নির্বাচনে তিনি একক ও ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আগে দল চালাতো আওয়ামী লীগ। আর এখন দল চালাচ্ছেন শাহরিয়ার। এ কারণেই নৌকার ভরাডুবি।
কয়েক বছরে বাঘা ও চারঘাট উপজেলার স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণে নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি ধরা পড়েছে। ২০২১ সালে বাঘা উপজেলা আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুজ্জামান শাহিদ মেয়র পদে ভোট করে হেরেছেন। পাস করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী। জয়গুননেসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এই কেন্দ্রে মোট এক হাজার ৭০০ ভোটের মধ্যে নৌকা পেয়েছিল মাত্র ৭৭ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তার আলী পেয়েছিলেন এক হাজার ১৯৫ ভোট। ফলে শাহরিয়ার আলমের বাড়ির পাশের কেন্দ্রেই ধরাশায়ী হয় নৌকা।
এর আগে ২০১৭ সালে বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আক্কাছ আলী। ২০১৪ সালে বাঘা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল আলমকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জামায়াত নেতা মাওলানা জিন্নাত আলী।২০১৫ সালে চারঘাট পৌরসভা নির্বাচনেও ভরাডুবি হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নারগিস খাতুনের। ওই ভোটে বিএনপির প্রার্থী জাকির ইসলাম বিকুল মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে চারঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। হেরেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ফকরুল ইসলাম।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা আক্কাছ আলী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১২ হাজার ৩৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহিনুর রহমান পিন্টু নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ১৮৭ ভোট। প্রায় দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে হেরেছে নৌকা।
বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় গেল কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, নৌকার বিদ্রোহী হয়ে ভোট করে নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারাই। অথচ দলের মনোনীত প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এসব নির্বাচনে শাহরিয়ার আলম নিজের পছন্দের নেতাদের প্রার্থী হতে সহযোগিতা করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এমপির পছন্দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তৃণমূলে জনপ্রিয় নেতারা। এ কারণে বিদ্রোহীরা বিজয়ী হয়েছেন।
বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত আক্কাছ আলী বলেন, ‘এলাকায় কোনো নেতা জনপ্রিয় হলে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার তাকেই ছেটে ফেলেন। ২০১৭ সালে তিনিই ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারিয়েছিলেন। তার সঙ্গে যারা থাকবেন তাদেরই তিনি নৌকা দেবেন। তিনি মনে করেন নৌকা পেলেই প্রার্থী পাস করবে। কিন্তু ভোটাররা বুঝিয়ে দিয়েছেন, জনপ্রিয় নেতাদের মূল্যায়ন না করলে কী রকম পরাজয় হয়।’
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বাঘা পৌরসভার ভোটার আমানুল হাসান দুদু ক্ষোভ প্রকাশ করে আমাদের সময়কে বলেন, ‘সদ্য বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে একজন টোকাইকে দলে ভিড়িয়েছিলেন শাহরিয়ার। তারপর টাকা-পয়সা কামিয়ে শাহরিয়ারের আশির্বাদে সে নৌকার মেয়র প্রার্থী হয়েছিল। জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ কারণে হেরেছে। আগে দল চালাত আওয়ামী লীগ। আর এখন চালান এমপি। ভুল প্রার্থী সিলেকশনের কারণে সবখানেই হারছে নৌকার প্রার্থীরা।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলমকে একাধিকবার কল ও মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যে কোনো স্থানীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের সুপারিশ করে আমরা দুইজনের নাম কেন্দ্রে পাঠাই। সেখান থেকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিএনপি-জামায়াতের ভোট পাওয়ায় বিজয়ী হচ্ছে।’