তুহিন সারোয়ার :-
গাজীপুর মহানগর ভোগড়া ফাঁড়ি ইনচার্জ এস,আই,মোঃ নাজমুলের বিরুদ্ধে সাধারণ নীরিহ মানুষদের ধরে এনে হয়রানী ও অর্থ আদায় ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধীদের ধরে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে ছেড়ে দেয়া, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীদের না ধরে তাদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক বখরা আদায়, ফুটপাতসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়সহ স্থানীয় মাদক ও পতিতা ব্যাবসা নিয়ন্ত্রন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বোর্ড বাজার, সাইনবোর্ড, মালেকের বাড়ী, চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ফুটপাতের দোকানীদের কাছ থেকে গাজীপুর মহানগর ভোগড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোঃ নাজমুলের নেতৃত্বে সদর থানার ড্রাইভার এবং ভোগড়া ফাঁড়ির কতিপয় পুলিশ সদস্য প্রতিমাসে প্রায় ৩ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মালেকের বাড়ী এলাকার ফুটপাতের এক প্রসাধনী বিক্রেতা বলেন, আমি দৈনিক দুইশত টাকা চাঁদা দেই। চাঁদা কাকে দেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৌহিদুল ইসলাম ওরফে গোপালগঞ্জের তওহীদ নামে পরিচিত এক লোক এই টাকা ভোগড়া ফাড়ি ইনচার্জ এসআই নাজমুলের জন্য নেয়। টাকা না দিলে আমাদের বসতে দেয় না।
এছাড়াও এলাকার একাধিক ফুটপাত দোকানদার ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোগড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নাজমুল মালেকের বাড়ী থেকে প্রতিদিন ২ হাজার, সাইনবোর্ড থেকে ৩ হাজার, বোর্ড বাজার থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে ভোগরা ফাঁড়ির ইনচার্জের নামে মালেকের বাড়ী থেকে প্রতিদিন এক হাজার, সাইনবোর্ড থেকে ১ হাজার, বোর্ড বাজার ও চৌরাস্তা থেকে ৪ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। আর এসব টাকা পুলিশে নিয়োগকৃত দালাল মালেকের বাড়ীর মোস্তফা, সাইনবোর্ড এলাকায় তৌহিদুল ইসলাম ওরফে গোপালগঞ্জের তওহীদ, বোর্ড বাজার এলাকায় লিটন প্রতিদিন থানার অফিসার্স ইনচার্জ ও ভোগড়া ফাঁিড়র ইনচার্জ এর নাম করে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। টাকা না দিলে ফুটপাতে দোকানদারী করতে দেয়া হয় না। শুধু তাই নয়, ভোগড়া ফাঁড়ির সামনেই কোনাবাড়ী রোড়ে রাস্তার পার্শে¦ই রয়েছে ২০/২৫ টং দোকান। এসব দোকান থেকে ভোগড়া ফাঁড়ি ইনচার্জ নাজমুলকে প্রতি মাসে এক হাজার দুইশত টাকা করে চাদা দিতে হয় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাদিক দোকানদার জানিয়েছেন। পুলিশের নিয়োগকৃত দালাল মালেকের বাড়ীর মোস্তফা এবং সাইনবোর্ড এলাকার তওহিদ এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি।
ফুটপাত ব্যবসায়ীরা আরো জানায়, নিয়মিত পুলিশ ও তাদের নিয়োগকৃত দালালদের চাঁদা না দেয়া হলে হরতাল বা অবরোধের সময় বিনা অপরাধে পুলিশ এসব ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে ভাংচুর বা জ্বালাও পোড়াওয়ের মামলায় আদালতে প্রেরণ করে থাকে।
গত ২৪শে মে, রাত ৩ টার দিকে প্যাসেঁঞ্জার নিয়ে গাজীপুর আসার পথে নাওজোড় এলাকা থেকে কোনাবাড়ী মৌচাক এলাকার সিরাজ নামের এক সিএনজিসহ (গাড়ী নং গাজীপুর-থ-১১-৩৯৮৯) চালককে আটক করে ভোগড়া পুলিশ, তাকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে তার স্বজনদের নিকট ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন এসআই নাজমুল। পরদিন দুপুর ২ টার দিকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে সেই সিএনজি চালককে ছেড়ে দেয় এসআই নাজমুল। ছেড়ে দেয়ার সময় বলে এই ঘটনা কোন সাংবাদিককে জানালে আবারও গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরন করার ভয় দেখায় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সিরাজ এবং তার ভাই সেলিম।
গত ৩১শে মে দুপুর ৩ টার দিকে মোগরখাল এলাকার সাগর নামের এক সিএনজি চালককে ভোগড়া বাইপাস সিএনজি ষ্ট্যান্ড থেকে সিএনজিসহ (গাজীপুর থ-১১-০০২৮) আটক করে ভোগড়া ফাঁড়ি পুলিশ। মাদকের মামলার চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে পরদিন দুপুর ১১টার দিকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে চালক সাগরকে ছেড়ে দিলেও গাড়ীটি আটক রাখা হয়।
অপরদিকে চান্দনা চৌরাস্তা, বাইপাস মোড়, সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত আবাসিক হোটেলগুলো থেকে মাসিক ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক গাজীপুর জেলা প্রসাশক এবং জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অসামাজিক কার্যকলাপের কারনে গাজীপুরের আবাসিক হোটেল গুলোতে অভিযান চালিয়ে সেই সব হোটেলে তালা মেরে চাবি থানায় জমা নেয়া হয়। গাজীপুর জেলা প্রসাশক এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে বর্তমানে গাজীপুরে অনান্য এলাকায় আবাসিক হোটেল গুলোতে পতিতা ব্যাবসা বন্ধ হলেও ভোগড়া ফাঁড়ি এলাকার সেক্সজোন হিসেবে পরিচিত হোটেল রংধনু এবং টাঙ্গাইল রোড়ে আবস্থিত হোটেল রজনীগন্ধার মালিক পক্ষ বলেন,প্রত্রিকায় নিউজ করে কোন লাভ নেই,ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নাজমুল স্যারের সহযোগিতায় এই ব্যাবসা করছি।
এছাড়া হোটেল রংধনুর ম্যানেজার মামুনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সম্প্রতি গাজীপুর জেলা প্রসাশক এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গাজীপুরের আবাসিক হোটেল গুলোতে অভিযান চালিয়ে হোটেলে তালা মারা হয়েছিল আবার তা খুলেও দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আমাদের হোটেলে শুধু স্বামী-স্ত্রীরা আসেন। তারপরও থানা পুলিশ ও ভোগড়া ফাঁড়ির ইনচার্জকে মাসোহারা দিতে হচ্ছে। হোটেল রংধনু মালিক পক্ষ মামুন উল্টা প্রশ্ন ছুড়ে এই প্রতিবেদককে বলেন,তা না হলে আমরা ফাড়ির পাশেই কি ভাবে ব্যাবসা করি বলেন ?তাই টুকি-টাকি ওসব ব্যবসা না করলে চলবে কি করে ? আইন অনুযায়ী হোটেল বোর্ডারদের রেজিস্টারে নাম, ঠিকানা এবং স¦ামী-স্ত্রীদের ক্ষেত্রে পরিচিতি, জাতীয় পরিচয় পত্র, কাবিননামা, জন্মনিবন্ধন, এবং ক্যামেরায় ছবি সংরক্ষন করার নিয়ম থাকলেও আপনারা তা পালন করছেন না কেন, জবাবে মামুন বলেন এব্যাপারে এসআই নাজমুল স্যারকে বলেন তিনি আপনাদের বলে দিবেন।
অন্যদিকে ভোগড়া এলাকায় মাদকের অভয়ারন্য যা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে এখানকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এখন চরমে। প্রতিদিন চুরি,ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক ঘঁটনা ঘটেই চলেছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মাদক, এই এলাকায় প্রায় ১০/২০ টি স্পটে নিয়মিত মাদক কেনা বেচা হয়ে থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বার বার বিষয়টি ভোগড়া ফাঁড়ি ইনচার্জকে অবহিত করেও কোন উপকারে আসছে না। এসআই নাজমুল বিষয়টি দেখছি বলে এড়িয়ে যান। ভোগড়া পিয়ারা বাগান, বোর্ড বাজার, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার মাদক ব্যাবসায়ীরা জানান, ব্যাবসা আর আগের মত নাই, এখন পুলিশকে বখরা দিয়ে অলিতে গলিতে চায়ের দোকানেও মাদক বিক্রি হয়ে থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদক ব্যবসায়ীরা বলেন, এসআই নাজমুল স্যারকে নিয়মিত মাসোহারা দিতে হয়, আর ব্যাবসা ছেড়ে দিলে পুলিশ ঝামেলা করে এবং গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে টাকা দাবী করে তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই ব্যাবসা করে যাচ্ছি।
এব্যাপারে ভোগড়া ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই নাজমুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপরোক্ত বিষয়গুলো অস্বীকার করে বলেন, ফুটপাতের দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছি, এক সময় চাঁদা আসতো এখন আর তা নেই, তাই চাঁদা আদায়ের প্রশ্নউ উঠে না। আর হোটেল রংধনু ও রজনীগন্ধাতে দেহ ব্যবসা এখন আর আগের মতো হয় না, সেই সব হোটেলে স্বামী-স্ত্রীরা যাতায়াত করে, এক্ষেত্রে আমার কিছু করার নাই আর মাদক আমার এলাকায় নাই বলেই চলে।
এ বিষয়ে জানতে জয়দেবপুর মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ রেজাউল হাসানের সেলফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।