মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর উত্তরা মেট্রো প্রদর্শনীতে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। কীভাবে স্টেশনে যাবেন, কতক্ষণ পরপর ট্রেন আসবে তা জানতে চাইছেন নগরবাসী। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেট্রোরেল চালুর পর শুরুর তিন মাস সকাল ও বিকাল চার ঘণ্টা করে চলতে পারে। পরে যাত্রীর চাহিদা বিবেচনায় বাড়বে ট্রেন চলাচলের সংখ্যা।
জানা গেছে, শুরুতে ট্রেন ছাড়বে ১০ মিনিট পর পর। ট্রেন পুরোদমে চললে বিরতি দেবে সাড়ে তিন মিনিট। তবে আগামী ২৬ মার্চ মেট্রোরেল পুরোপুরি বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যাওয়ার পর স্টেশনে মাত্র ৩০ সেকেন্ড যাত্রাবিরতি করবে। এক ট্রেনের সঙ্গে অপর ট্রেনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার কাজটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বা লাইনে কোনো বাধা থাক?লে ট্রেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেমে যাবে।
ট্রেনে ওঠার একমাত্র পথ স্টেশন ভবন। স্টেশনগুলো তিনতলা। সড়ক থেকে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে যাত্রীরা দ্বিতীয় তলার কনকোর্স হলে উঠবেন। এই তলায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা যন্ত্রপাতি রয়েছে। তৃতীয় তলায় রেললাইন ও প্ল্যাটফরম। একমাত্র টিকিটধারী ব্যক্তিরাই তৃতীয় তলায় যেতে পারবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনলাইনের পাশে থাকবে বেষ্টনী। স্টেশনে ট্রেন থামার পর একসঙ্গে খুলে যাবে বেষ্টনী ও ট্রেনের দরজা। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে। ট্রেন পরিচালনার জন্য একজন চালক (অপারেটর) এবং স্টেশনে একজন নিয়ন্ত্রক (কন্ট্রোলার) থাকবেন। পাশাপাশি ওসিসিতে (অপারেশনস কন্ট্রোল সেন্টার) থাকবেন কর্মকর্তারা। সবার কাজ মূলত পর্যবেক্ষণ করা, নির্দেশনা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, তা দেখা।
মেট্রোরেলের প্রতিটি কোচের দুই পাশে চারটি করে আটটি দরজা আছে। অর্থাৎ ট্রেন স্টেশনে থামলে চারটি দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। বাকি চারটি বন্ধ থাকবে। পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে থাকবে অডিও-ভিজ্যুয়াল ঘোষণা। দুই প্রান্তের দুটি কোচে দুটি করে চারটি হুইলচেয়ার বসানোর ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। তবে ট্রেন কোন স্থানে কত গতিতে চলবে, সেটা ঠিক করবে কর্তৃপক্ষ। ট্রেনের নকশা প্রণয়ন ও তৈরির কাজ করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম।
মেট্রোরেল দেশে আসার পর উত্তরায় ডিপোতে প্রতিটির ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। এরপর হয়েছে আরেক ধাপের পরীক্ষামূলক চলাচল (ট্রায়াল রান)। প্রথমে উত্তরা থেকে পল্লবী, পরে আগারগাঁও পর্যন্ত তা চলাচল করে। যাত্রীসহ বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের সময় যে গতিতে এবং যেসব নিয়ম মেনে চলাচল করার কথা, ঠিক সেভাবে ট্রায়াল রান করা হয়।
মেট্রোরেলের প্রতি ট্রেনে ছয়টি কোচ বা বগি থাকছে। দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রীও বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এর প্রতিটিতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে নয় ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। তাদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) এই ট্রেনের দুই পাশে সবুজ রঙের দুই সারি লম্বা আসন পাতা হয়েছে।