১৫ গোল করার সাথে দুই বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী। কিন্তু রোনালদো নাজারিও তার শেষ বিশ্বকাপে সেমি ফাইনালেও খেলতে পারেননি। অপর দুই ব্রাজিলিয়ান জিকো ও সক্রেটিস তাদের শেষ বিশ্বকাপের (১৯৯৮) ম্যাচে কোয়ার্টার ফাইনালে যথাক্রমে পেনাল্টি ও টাইব্রেকার মিস করে দলকে ডুবিয়েছেন।
একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ এনে দেয়া দিয়েগো ম্যারাডোনার শেষ বিশ্বকাপে (১৯৯৪) মাদক সেবনের অপরাধে নিষিদ্ধ হন। তার দলও দ্বিতীয় রাউন্ডের বেশি যেতে পারেনি।
১৯৯৮ সালের ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বকাপটা এসেছিল জিনেদিন জিদানের কাঁধে ভর দিয়ে। ২০০৬ সালে তার লালকার্ডেই ফ্রান্স ফাইনালে হারে।
এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবার তার শেষ বিশ্বকাপে উপেক্ষিতের মতো দলে ছিলেন। বদলী হিসেবে নেমেও পারেননি দলের হার এড়াতে।
এই গ্রেট ফুটবলারদের চেয়ে কি ব্যতিক্রমী হতে পারবেন লিওনেল মেসি? তার বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটা কি ট্রফি উৎসবে হবে? নাকি ২০১৪ -এর ফাইনালের মতো ধীরলয়ে অবনত মস্তকে পুরস্কার প্রদান মঞ্চে যেতে হবে। উল্লেখ্য জার্মানীর মিরোস্লাভ ক্লোসে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ১৬ গোলদাতা। তার শেষ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল জার্মানরা।
কাতারই মেসির শেষ বিশ্বকাপ। এমনও হতে পারে কাতার থেকে ফেরার পর জাতীয় দলে আর না খেলার ঘোষণাও দিয়ে ফেলতে পারেন। সেটা অবশ্য পরের হিসেব। এখন যা তরতাজা তা হলো ফুটবলের এই জীবন্ত কিংবদন্তীর বিশ্বকাপ বিদায়ী ম্যাচ কি চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক হিসেবে হবে? সে উত্তর মিলবে আগামীকাল কাতারের দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামের ৮৯ হাজার দর্শক এবং টিভি পর্দায় চোখ রাখা শত কোটি দর্শকের সামনে।
জনপ্রিয়তা এবং তারকা খ্যাতিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর প্রবল প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনার এই অধিনায়ক। কাতারের মাঠে দু’জনই তাদের পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলেছেন। মেসি রোনালদোকে টপকেছেন দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে। পর্তুগীজ তারকাটির ফাইনাল শূন্য বিশ্বকাপ।
মেসির মতোই আজ শেষ বিশ্বকাপ বলা যায় হুগো লরিচের। মেসি আর্জেন্টিনার আর লরিচ ফ্রান্সের অধিনায়ক। ফ্রান্স তার নেতৃত্বে গত বিশ্বকাপ জিতলেও তারকা খ্যাতিতে মেসির ধারে কাছেও নেই। একই সাথে শেষ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ফরাসী স্ট্রাইকার অলিভার জিরুডেরও। আজ ফাইনালে এরা সফল হলে তাদের দেশ খুশী হবে। কিলিয়ান এমবাপ্পের টানা দুই বিশ্বকাপ জেতা হবে।
কিন্তু সারা ফুটবল বিশ্ব চেয়ে আছে মেসির দিকে। নন্দিত এই গ্রেট ফুটবলারের শেষটা ট্রফি জিতেই হোক এটাই সবার প্রত্যাশা।
ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনার ফুটবল যার কারণে বিশ্বব্যাপী আরো জনপ্রিয়তা পেয়েছে তিনি মেসি। জাতীয় দলে ট্রফির অভাব ঘুচিয়েছেন গতবছর কোপা আমেরিকা জিতে। ফুটবল থেকে সব কিছুই পেয়েছেন। রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি অর তার দখলে। ছয়বার ইউরোপিয়ান ফুটবলে গোল্ডেন স্যু জয় তার।
লা লিগায় ৩৬টি হ্যাটট্রিক করে রেকর্ডটি নিজের করে রেখেছেন। স্প্যানিশ লিগে সর্বোচ্চ ৪৭৪ গোলের একক মালিক তিনি। বার্সেলোনার হয়ে রেকর্ড ৩৫ ট্রফি জেতা ফুটবলার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড গড়া আট হ্যাটট্রিকের মালিক তিনি। বার্সেলোনার জার্সিতে সব আসর মিলে রেকর্ড ৬৭২ গোল করে তিনি নিজেকে সবার উপরে নিয়ে যান। লা লিগায় সবচেয়ে বেশী ১৭২ গোলের অ্যাসিস্টও তার।
আর দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলারদের মধ্যে জাতীয় দলে সবচেয়ে বেশী ৯৬ গোল এই পিএসজি তারকার। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ১১ গোল তার। আর বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৫ ম্যাচ খেলে ছুঁয়ে ফেলেছেন জার্মানির লোথার ম্যাথিউজকে।
আগামীকাল ফাইনালে নামলেই তিনি হবেন আরেক রেকর্ড বিশ্বকাপের ২৬তম ম্যাচ খেলা ফুটবলার। নিজের হাজারতম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোল করে দলকে জেতানোর সাথে নিজেও হয়েছেন ম্যাচ সেরা। তবে কাতার বিশ্বকাপের নিজের খেলা ছয় ম্যাচের চারটিতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া এই ফুটবলারের হাতে বিশ্বকাপ না উঠলে পানসে হয়ে যাবে সবই। এক বিশ্বকাপ ট্রফিই যে অন্য সব অর্জনের চেয়ে আকাশসম উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।