দেশে গত মাসে ২৫ জেলায় একযোগে ১০০ সেতু চালু করেছিল সরকার। এবার ৫০ জেলায় একসঙ্গে ১০০ সড়ক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এসব সড়কের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য দুই হাজার কিলোমিটার। আগামী ২১ ডিসেম্বর একযোগে এসব সড়কের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি এসব সড়কের উদ্বোধন করবেন।
জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশ- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও মিয়ানমার নিয়ে গঠিত সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ফোরাম। এই আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের আওতায় ২১ উপ-আঞ্চলিক সড়ক করিডর উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ভেতরে গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়কটি চার লেন করার উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। এ সড়কে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন নাওজোড়, কোনাবাড়ি, শফিপুর, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, গোড়াই এবং রাবনায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটি নির্মাণে
সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে বিদেশি ঋণ। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ১০০ সড়কের মধ্যে সাসেক কর্মসূচির আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা ছাড়া বাকি সব সরকার নিজস্ব অর্থায়নে করেছে।
সওজ সূত্র জানায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের মধ্যে পড়েছে নতুন সড়কগুলো। এর মধ্যে সাসেকের আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়কটি সবচেয়ে বড়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। সবচেয়ে ছোট গাজীপুরের ইজতেমা সড়ক। এর দৈর্ঘ্য ১.৩ কিলোমিটার। বেশি সড়ক ঢাকা বিভাগে আর কম সিলেটে। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় কোনো সড়ক নেই।
সওজের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেন, ১০০ সেতু উদ্বোধনের পর এবার ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সারাদেশে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই সড়কগুলো একযোগে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো দেশের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
জানা গেছে, সওজের ঢাকা বিভাগের অধীনে ১২ জেলায় সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ঢাকা বিভাগে রয়েছে ৩২টি সড়ক। এ রকম ময়মনসিংহ বিভাগে ৬টি সড়ক করা হয়েছে তিন জেলার অধীনে। খরচ হয়েছে ৭৪৯ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫টি সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। চার জেলা রয়েছে এর আওতায়। একইভাবে সিলেট বিভাগের চার জেলায় ৬২৯ কোটি টাকায় করা হয়েছে চার সড়ক। এসব সড়কের দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার। খুলনা বিভাগে ১৬টি সড়ক হয়েছে চার জেলাজুড়ে, খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। রাজশাহী বিভাগের অধীনে ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় জেলায় আটটি সড়ক নির্মিত হয়েছে। রংপুর বিভাগে আট জেলায় ১৫টি সড়ক নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫০৮ কোটি টাকা। বরিশাল বিভাগের অধীনে পাঁচ জেলায় ৩৮২ কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে চারটি সড়ক। অর্থাৎ একশটি সড়ক নির্মাণে মোট ১৪ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে সরকারি খাত থেকে। এর বাইরে সাসেক প্রকল্পের অধীনে ৭০ কিলোমিটার সড়ক তৈরিতে অর্থায়ন করেছে এডিবি।
সাসেক প্রকল্পের পরিচালক মো. ইসহাক বলেন, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক প্রকল্পে ব্যয় ৬ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। এ মহাসড়কে নির্মিত হয়েছে চন্দ্রা ফ্লাইওভার, ওভারপাসসহ অনেক অবকাঠামো। যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় এটি বিস্তর ভূমিকা রাখবে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, তাদের অধীনে বর্তমানে দেশে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক আছে। এর মধ্যে আছে ১৩ হাজার ৮০০ কালভার্ট এবং সাড়ে চার হাজার সেতু। এই সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে তিন হাজার ৯৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, চার হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৮৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক। নতুন ১০০ সড়ক উদ্বোধন হলে এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরও দুই হাজার কিলোমিটার রাস্তা।