মেসি কি পারবেন ম্যারাডোনা হয়ে উঠতে?

Slider খেলা


ক্লাব ফুটবলে জিতেননি এমন কোনো শিরোপা বা অর্জন বাকি নেই লিওনেল মেসির! বার্সেলোনার হয়ে স্পেনে হয়েছেন সর্বজয়ী। স্পেনের বাইরে ফ্রান্সেও পিএসজিকে জিতিয়েছেন লীগ ওয়ান শিরোপা। পিচিচি, গোল্ডেন বুট, বেস্ট প্লেমেকার অ্যাওয়ার্ড তো আছেই, জিতেছেন রেকর্ড সর্বোচ্চ সাতবার ব্যালন ডি’অর। মেসির ব্যক্তিগত এই অর্জন যেকোনো ফুটবলারের জন্যই ঈর্ষণীয়।

তবুও নিন্দুকেরা বলত, জাতীয় দলের হয়ে মেসি কিছু জিতেননি। অতঃপর সেই নিন্দাও মেসি ঘুচিয়েছেন ২০২১ সালে আর্জেন্টিনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে কোপা আমেরিকা জিতিয়ে। এত শত অর্জনের ভীড়েও যদি লিওনেল মেসির জীবনে অপ্রাপ্তি বলতে যদি কিছু থাকে, তা হলো বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা।

২০০৬ বিশ্বকাপে ১৯ বছর বয়সী মেসি জেতেন উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার। অথচ তখনো পুরোপুরি কোচের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। পরে ২০১০ বিশ্বকাপে মেসি ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটাচ্ছিলেন বটেই, তবে তৎকালীন কোচ ডিয়োগো ম্যারাডোনা মেসিকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন। ফলে মেসির সেই বিশ্বকাপ যাত্রাও ব্যর্থ হয়।

২০১৪ বিশ্বকাপ সম্ভবত মেসির ক্যারিয়ারের সেরা। নিজের ফর্ম আর ব্যালেন্সড দল, দুটো মিলেই হয়েছিল জমে ক্ষীর। তবে সেইবার মেসি আর বিশ্বকাপ স্বপ্নের মধ্যে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক মারিও গোৎজে। তার গোলেই স্বপ্নভঙ্গ হয় আলবিসেলেস্তাদের।

আর ২০১৮ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা ছিল কাগজে কলমে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বাজে দল। পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে ২০০২ বিশ্বকাপের পর এতটা বাজে ছিল না। সেইবার মেসি যদি নাইজেরিয়ার বিপক্ষে রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত না হতেন, তাহলে গ্রুপ স্টেজেই বিদায়ঘণ্টা বাজতো আলবিসেলেস্তেদের।

ফুটবল দলীয় খেলা। ওয়ান ম্যান আর্মি নৈপুণ্যে অথবা একজনের কাঁধে চড়ে হয়তো অনেক দূর আগানো যায়, ট্রফি জেতার কাছাকাছি যাওয়া যায়, তবে ট্রফি জেতা যায় না। ২০২২ বিশ্বকাপের মেসি ২০১৪’র মতো তরুণ না হলেও ধার একটুখানিও কমেনি। নিজের ব্যক্তিগত ফর্মের পাশাপাশি মেসি এবার পাশে পেয়েছে একটি ভারসাম্যপূর্ণ স্কোয়াডকে। কাগজে কলমে হয়তো এই স্কোয়াডের সবাই বিশ্বসেরা না, তবে তারা সবাই যোদ্ধা। মেসির জন্য তারা প্রতিটি ম্যাচকে যুদ্ধ মনে করেন।

এই যোদ্ধাদের নিয়েই শুরু হয় মেসির বিশ্বকাপ মিশন। তাদের নিয়েই মেসি এসেছেন এতটা দূর। তবে এই যোদ্ধাদের প্রধান সেনাপতি লিওনেল মেসি, সেটি ম্যাচের পর ম্যাচ তার পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে। সৌদি আরবের সাথে করলেন ১ গোল, মেক্সিকোর সাথে শুরুতে অবিশ্বাস্য এক জায়গা থেকে করলেন গোল, এরপর এঞ্জো ফার্নান্দেসকে করলেন এসিস্ট। পেলেন সেই ম্যাচের ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার।

পোল্যান্ড ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেছিলেন ঠিকই, তবে যারা সেই ম্যাচ দেখেছেন তারা বলতে বাধ্য মাঠে এমন কিছু নেই যা মেসি করেননি। সবচেয়ে বেশি চান্স ক্রিয়েট, সবচেয়ে বেশিবার ড্রিবল, সবচেয়ে বেশিবার ডুয়েল জিতেন তিনি। যারা ম্যাচ দেখেননি তারাও এই কয়েকটি বাক্য দেখে বুঝবেন এই ম্যাচ মেসির অবদানে পরিপূর্ণ।

নক-আউট স্টেজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোল অথবা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এসিস্ট; দুটোই ছিল এক কথায় অবিশ্বাস্য। এই দুটো গোল ও এসিস্টকে জ্যামিতির পরিমাপ অথবা পদার্থবিজ্ঞানের সময়ের সূত্রে ব্যাখা করা লাগবে। কারণ সামান্য সময় বা মাপের এদিক সেদিক হলে গোল বা এসিস্ট দুটির একটিও হতো না।

হয়তো আজ ক্রোয়েশিয়ার সাথেই মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্নের অবসান ঘটবে। নয়তো ফুটবলের ক্ষুদে জাদুকর আর্জেন্টিনাকে ক্রোয়েশিয়ার বাধা টপকে বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে নিয়ে যাবে। ফলাফল যাই হোক, এখন পর্যন্ত মেসির বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স নিয়ে নিন্দুকেরাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে বাধ্য। নিজের শেষ বিশ্বকাপে একক নৈপুণ্যের কোনো কমতি রাখেননি মেসি। পাঁচ ম্যাচে চার গোল, দু’টি এসিস্ট, তিনটি ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ! সর্বশেষ বিশ্বকাপের মঞ্চে কে এমন নৈপুণ্য দেখাতে পেরেছিলেন?

হ্যাঁ, যদি উত্তর খোঁজেন, তাহলে মনে হবে কিংবদন্তি ডিয়োগো ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কথা। সেইবারের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয়েছিল তার হাতে সোনালী ট্রফিটি উঠেই, মেসি কি তার পূর্বসূরী ম্যারাডোনার মতো হতে পারবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *