ম্যাচের এক পর্যায়ে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। কিন্তু ৮৪তম মিনিটে ম্যাচের দ্বিতীয় পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। ফলে নির্ধারিত সময়ে সমতায় শেষ করার সুযোগ তৈরি হয়েছিল গ্যারাথ সাউথগেটের দলের সামনে। কিন্তু স্পট কিক থেকে এবার গোল করতে ব্যর্থ হলেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন। তার এই সুবর্ণ সুযোগ মিসে ম্যাচের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ওই ২-১ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়ে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকিট পেয়ে গেল দিদিয়ের দেশমের দল।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) দোহার আল বায়েত স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। ম্যাচের ১২তম মিনিটে প্রথমবারের মতো গোলের সুযোগ পায় ফ্রান্স। ইংলিশ রক্ষণের ডান পাশ থেকে ডেম্বেলের ক্রসে হেড করেন জেরার্ড। কিন্তু বল সোজা চলে যায় ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ডের হাতে।
এর পাঁচ মিনিট পরেই প্রথম গোলের দেখা পায় দেশমের দল। গ্রিজম্যানের কাছ থেকে বল পেয়ে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে ডান পায়ের বুলেট গতির শট নেন টিচুয়ামেনি। এত দূর থেকে তিনি যে শট নিবেন তা বোধহয় ইংলিশ ফুটবলাররাও কল্পনা করেননি। ফলে ইংলিশ গোলকিপার কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জালে জড়ায়।
এক গোলে পিছিয়ে পড়ে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে ইংল্যান্ড। ২৩ মিনিটে হ্যারি কেইন দারুণ শট নিলে সেটি রুখে দেন লরিস। ২৭ নিনিটে ম্যাচে উত্তেজনা ছড়ায় হ্যারি কেইনের পেনাল্টি আপিল। ভিএআর এর মাধ্যমে দেখা যায় ফাউলটি ডি বক্সের বাইরে হয়েছিল যার দরুণ পেনাল্টি বঞ্চিত হয় তারা। ৩০ মিনিটে আবারো হ্যারি কেইনের দূরপাল্লার বুলেট গতির শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন লরিস।
ম্যাচের ৩৮ মিনিটে প্রথমবারের মত গোলের সুযোগ পান এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা এমবাপ্পে। ডি-বক্সের ভেতর তার বা পায়ের শট চলে যায় গোলবারের উপর দিয়ে। ফলে প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময়ের খেলায় ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্রান্স।
বিরতি থেকে ফিরে ৫২তম মিনিটে ফ্রান্সের ডি-বক্সে জুড বেলিংহ্যামের সঙ্গে পাস দেওয়া নেওয়া করছিলেন তরুণ ফরোয়ার্ড বুকায়ো সাকা। কিন্তু তাকে ক্লিপ করে ফেলে দেন ফ্রান্সের গোলদাতা টিচুয়ামেনি। রেফারি ভিএআরের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে পেনাল্টির নির্দেশ দেন।
পরে ৫৪তম মিনিটে সেখান থেকে ইংলিশ অধিনায়ক কেইন স্পট কিকে পেনাল্টি শট নেন। তার শট ফ্রান্সের গোলকিপার লরিসের বিপরীত পাশ দিয়ে বল জালে জড়ালে ১-১ গোলের সমতায় ফেরে ইংল্যান্ড। এরপর দুই দলই আক্রমণের গতি বাড়ায়। তবে কেউ ঠিক গোলের দেখা পাচ্ছিল না।
কিন্তু ৭৮ মিনিটে জেরার্ডের গোলে আবারও এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ২-১ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সেমিফাইনালের পথে অনেকটা এগিয়ে যায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু ৮৪ মিনিটে আবারও পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। তবে স্টেডিয়ামে ইংলিশ দর্শকদের স্তব্ধ করে দিয়ে অনেক উপর দিয়ে শট নেন ইংলিশ অধিনায়ক। ফলে গোলবঞ্চিত হওয়ার সাথে সাথে ম্যাচ থেকেও ছিটকে যায় তারা।
তবে খেলায় অনেক ফাউল হবার কারণে দ্বিতীয়ার্ধে রেফারি অতিরিক্ত ৮ মিনিট সময় বেঁধে দেন। গতকাল এই অতিরিক্ত সময়ে ফ্রি কিকের গোলে ম্যাচে সমতায় ফিরেছিল ডাচরা, তবে আজ ইংল্যান্ড ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পেলেও সেটা কাজে লাগাতে পারেনি। একটুর জন্য তা জালের উপর দিয়ে চলে গেলে রেফারি ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজালে ইংল্যান্ডের বিদায় ঘটে।
ফলে গত আসরে সেমিফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড এবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিলো। আর ইংল্যান্ডকে বিদায় করে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চলে গেল এমবাপ্পের ফ্রান্স।