নয়াপল্টনে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়ক খুলে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার পর নাইটিংগেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত চলাচলের রাস্তা খুলে দিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা খুলে দেওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন। তারা মিছিল স্লোগান না দিলেও কার্যালয়ে ও এর আশপাশের সড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছেন। রাস্তা খুলে দেওয়া হলেও গাড়ি নিয়ে পুলিশ টহল অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, রাস্তা বন্ধ করার পর সকাল থেকে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সাংবাদিকেরা অবস্থান করতে পারলেও বেলা সোয়া দুইটার দিকে সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হয়। এরপর বেলা দুইটার দিকে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে সিআইডির ক্রাইম সিনের দুটি গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে দায়িত্বরত গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিকেল তিনটার দিকে ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেছে। ডগ স্কোয়াড দলের সদস্যরাও ভেতরে তল্লাশি চালিয়েছে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘নাইটিংগেল মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতাল পর্যন্ত এই সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন অলিগলি ও অসংখ্য অফিস রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের বৈধ কাগজপত্র দেখিয়ে তাদের অফিস ও দোকান খুলতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এই রাস্তাকে ঝুঁকিমুক্ত মনে না করব ততক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে দেব না। আমাদের কাছে তথ্য আছে যে এখানে তারা আরও এক্সপ্লোসিভ ও ককটেল মজুত করে রেখেছে। তাই সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত না হলে আমরা এই রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছি।’
এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, নিরাপত্তার স্বার্থে এই রাস্তায় চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। রাস্তার দুপাশের দোকান এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে সকাল থেকে। তবে সাধারণ মানুষ তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
আগামী শনিবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে সামনে রেখে গতকাল বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ও সংলগ্ন এলাকায় জড়ো হচ্ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা, যাদের কাছাকাছি ছিলেন পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য।
পুলিশ সড়কে সমবেত বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে গেলে বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে, এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মকবুল হোসেন নামের একজন নিহত হন। তাকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি।
সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দলটির অনেক নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে চাল, খিচুড়ি, ১৫টি ককটেলের পাশাপাশি বোতলজাত পানি ও টাকা উদ্ধারের কথা জানায় বাহিনীটি।
অভিযান চলাকালে নয়াপল্টন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক আইনে মামলাটি দায়ের করে। মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও দেড় থেকে দুই হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।