বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার যে ঘোষণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দিয়েছিলেন, তার আওতায় বাংলাদেশ থেকে স্বল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী নেবে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার থেকে পাঁচ থেকে ছয়জনের গ্রুপে রোহিঙ্গাদের নেয়া শুরু হবে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতি বছর ৩০০ থেকে ৮০০ রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করা হবে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক সহকারি মন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েসের সাথে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন এসব কথা জানান। এর আগে জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার সাথে বিদায়ী সাক্ষাত করেন।
ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্লিঙ্কেনকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে আমাকে জানালো হলো, তারা কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে নেবে। আমি যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটেন ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও অনুরোধ করেছিলাম, বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নেয়ার জন্য।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস আমাকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী বছরে এক লাখ ২৫ হাজার শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়া হবে। এরমধ্যে ৩৫ হাজার এশিয়া থেকে নেয়া হবে। বাংলাদেশ থেকে অল্প সংখ্যক রোহিঙ্গাকে নেয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে ৬২ জন রোহিঙ্গাকের নেয়া হবে। ৮ ডিসেম্বর থেকে এসব রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর প্রতি বছর ৩০০ থেকে ৮০০ রোহিঙ্গাকে নেয়া হবে। আমি বললাম, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মোট সংখ্যার তুলনায় এটি নিতান্তই কম। সমুদ্রে এক ফোঁটা পানির মতো। তিনি এটি স্বীকার করে নিয়ে বললেন, এটা প্রক্রিয়ার শুরু।
ড. মোমেন বলেন, পুনর্বাসনের জন্য তৃতীয় দেশে রোহিঙ্গাদের নেয়ার উদ্যোগটা ভালো। আমরা চাই রোহিঙ্গারা সুন্দর জীবন পাক। তবে সমস্যাটা হলো, বাংলাদেশ থেকে উন্নত দেশে যাওয়ার সুযোগ পেলে রাখাইনে থাকা অবশিষ্ট ছয় লাখ রোহিঙ্গা এদিকে চলে আসতে পারে। এটাতে একটি ঝুঁকি রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নয়েসের সাথে রোহিঙ্গাদের শিক্ষার বিষয়ে আলাপ হয়েছে। আমি জানিয়েছি, ইউনিসেফের সহায়তায় ক্যাম্পগুলোতে ছয় হাজার স্কুল চলছে। তবে ভিন্ন মতাবলম্বীর বিকাশ ঘটানো বন্ধ করতে ক্যাম্পের ঘরে ঘরে মক্তব আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই সঙ্কটের মূল সমাধান হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অল্প সংখ্যক রোহিঙ্গাকে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের মাধ্যমে এই সমস্যারা সমাধান সম্ভব না। তবে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের আগে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। কেননা মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ২০১৭ সালের পরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা।
১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর থেকে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দেয়া পরামর্শ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা তারা নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি দায়বন্ধতা থেকে দিয়েছে।
রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক উত্তেজনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র বা জাপান কিছু জানতে চেয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে ড. মোমেন বলেন, এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সরকার এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।
১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় বাড়তি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আমরা মনে করি না বিএনপির সমাবেশ ঘিরে বিরাট একটা কিছু হবে। আমরা এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই।
ইতো নাওকির সাথে সাক্ষাত প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাপানের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ঢাকায় খুব আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের সাথে জাপানের সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতো নাওকিকে কূটনৈতিক পদক দেয়া হয়েছিল। তার মেয়াদকালে জাপান থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ এসেছে। জাপানের সহায়তায় বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প প্রায় শেষের দিকে। জাপানের প্রকল্পগুলোর ইতিবাচক দিক হলো, তারা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে। অনেক ক্ষেত্রে সাশ্রয় হওয়া অর্থ ফেরত দিয়ে দেয়।