কলেজছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে বিভাগীয় মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় উপসচিব এ কে এম রেজাউল করিমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এই কর্মকর্তা। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রেজাউল করিম রতন ২০১৭ সালে মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালে ওই কলেজেরই এক ছাত্রীকে ‘প্রতারণার’ ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন এবং সেই ঘটনার ভিডিও আছে বলে হুমকি দিয়ে পরে এক বছর তাকে ধর্ষণ করেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
এ অভিযোগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় মামলা হয়। এই মামলা করার আগের মাসে রতনের বিরুদ্ধে তাকে মারধরের অভিযোগে একটি মামলা করেছিলেন ওই ছাত্রী। ওই অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর গ্রেফতার হয়েছিলেন উপসচিব রেজাউল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ কে এম রেজাউল করিম (পরিচিতি নম্বর-৭৯৬১), পরিচালক (উপসচিব), জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র হিসেবে কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(১) ধারায় চার্জশীট দাখিল করা হয়। উক্ত মামলা তুলে নেয়ার জন্য মামলার বাদিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদান ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় আরেকটি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। তিনি বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনে থাকায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলায় অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করে তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির প্রার্থনা করলে ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এবং শুনানিতে তার দাখিলকৃত জবাব ও প্রদত্ত বক্তব্য সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলার আনীত অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৯ জুন ২০২২ তারিখের ৩৫ নম্বর স্মারকে এ কে এম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি পর্যালোচনান্তে সরকারি কর্মচারী (শালা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৭(৮) বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে গুরুদণ্ড প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক একই বিধিমালার ৭(৯) বিধি মোতাবেক তাকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক গত ১৪ আগস্ট দাখিলকৃত দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পর্যালোচনা করে তাকে গুরুদণ্ড হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গুরুদণ্ড আরোপের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হলে কমিশন প্রস্তাবিত গুরুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্তের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা এ কে এম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে রুজুকৃত এ বিভাগীয় মামলায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন প্রস্তাবিত দণ্ডের সাথে ঐকমত্য পোষণ করায় একই বিধিমালার ৪ (৩) (খ) বিধিমতে গুরুদণ্ড হিসেবে সরকারি চাকরি হতে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন।