সিলেটে ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে একে একে সব রুটে ধর্মঘট আহ্বান করছেন বাস মালিক সমিতির নেতারা। যদিও তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এ ধর্মঘট ডেকেছেন। তবে এই ধর্মঘট গণসমাবেশের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না বলে দাবি বিএনপি নেতাদের। তারা বলছেন, সকল বাধা উপেক্ষা করে ১৯ নভেম্বরের গণসমাবেশে মানুষের ঢল নামবে।
জানা যায়, মালিক সমিতি দু‘দিনের (১৮ ও ১৯ নভেম্বর) ধর্মঘট আহ্বান করেছে। মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে ওই দিন ধর্মঘট পালন করা হবে। তবে শুধু সিলেটে ১৯ নভেম্বর (শনিবার) ধর্মঘট পালিত হবে। কেননা, এর আগের দিন সিলেটে ধর্মীয় সংগঠন ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের’ ইজতেমার শেষ দিন। তাই শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ইজতেমার দিন ধর্মঘট পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি সাবেক বিএনপি নেতা আবুল কালাম জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এ ধর্মঘট ডেকেছেন। ধর্মঘটের সাথে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি জানান, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গ্রিল সংযোজন, সিলেটে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা ও নতুন করে অটোরিকশার নিবন্ধন না দেয়ার দাবিতে চলতি মাসের শুরুতে বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা প্রতীকী ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তারা পরিবহন ধর্মঘট পালন করবেন। এ সময়ে প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নিলে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: মঈনুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করার বিপক্ষে তারা।
পরিবহন মালিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সমাবেশের দু‘দিন আগ থেকে ধর্মঘট ডাকার জন্য মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ওপর চাপ ছিল। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও সিলেটের নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে তিন দিনের ধর্মঘট ডাকার অনুরোধ করেন। তবে সিলেটের মালিক ও শ্রমিক নেতারা ধর্মঘটের পক্ষে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে মালিক পক্ষ কেবল সমাবেশের দিন ধর্মঘট ডেকেছে বলে জানিয়েছে এই সূত্র।
আগামী ১৮ ও ১৯ নভেম্বর মৌলভীবাজারে ডাকা হয়েছে দু‘দিনের পরিবহন ধর্মঘট। জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির এ ধর্মঘটে বন্ধ থাকবে সব ধরনের যানবাহন। বুধবার রাতে এই ঘোষণা দেন মৌলভীবাজার বাস মিনিবাস মালিক সমিতির চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন আহমদ।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জ-সিলেট রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে সুনামগঞ্জ সড়কে অবৈধ সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছি। ফলে সেই দাবিতে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে হবিগঞ্জে এখনো ধর্মঘটের ঘোষণা না এলেও বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট আহ্বান করবেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ১৯ নভেম্বর সিলেট বিভাগে গণসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। সেই সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকারি মদদে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপির সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার চাপ দিয়ে ধর্মঘট আহ্বান করিয়েছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই গণজমায়েতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, ১৯ নভেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে সিলেটে যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পুলিশ বরাবরের মতোই পদক্ষেপ নিবে।