আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেটে বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। মহানগরীর চৌহাট্টায় সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এ গণসমাবেশ হবে। মাঠের পূর্ব প্রান্তে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। দলের নেতারা বলছেন, আগের ছয় গণসমাবেশের মতো সিলেটেও তারা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সিলেটে চার লাখের বেশি মানুষের জমায়েত হবে বলে মনে করছেন তারা।
সিলেট বিভাগে বিএনপির সাংগঠনিক জেলা পাঁচটি- সিলেট মহানগর, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ। এই পাঁচ জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরপাকড় শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
সিলেটের গণসমাবেশ সফল করতে একটি কেন্দ্রীয় রয়েছে। এই কমিটির অধীনে রয়েছে ছয়টি উপকমিটি। সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এবং যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
ছয় উপকমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী (আবাসন ব্যবস্থাপনা), চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির (ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা), সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী (প্রচার ও মিডিয়া), সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী (অভ্যর্থনা), মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন (আপ্যায়ন) এবং মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ূন কবির শাহীন (দপ্তর)।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘নানা বাধা উপেক্ষা করে এ পর্যন্ত ছয়টি গণসমাবেশ করেছি। এসব সমাবেশের অভিজ্ঞতা, দলের প্রতি নেতাকর্মীদের ভালোবাসা, তাদের সাহস ও উজ্জীবিত মনোবলই সিলেটের গণসমাবেশে সফলতা এনে দেবে।’
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুরের পর সপ্তম গণসমাবেশ হচ্ছে সিলেটে। চট্টগ্রাম ছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের সময় গণপরিবহন ধর্মঘট ছিল। কিন্তু সিলেটে এখন পর্যন্ত ধর্মঘটের তথ্য বিএনপি নেতাদের কাছে নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘আমরা মনে করি পরিবহন শ্রমিকরা গণসমাবেশের আগে ধর্মঘট দেবেন না।’ তবে প্রতি রাতেই কিছু কিছু নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তাদির।
গণসমাবেশের প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নিয়মিত গণসংযোগ, পথসভা, প্রচারপত্র বিতরণ, মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মীরা।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান বলেন, ‘আমরা কোন সরকারের অধীনে আছি, তা দেশি-বিদেশি সবাই জানেন। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরপাকড় শুরু করেছে।’ মৌলভীবাজার থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার নেতাকর্মী সিলেট যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলেও জানান তিনি।
হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জিকে গউস বলেন, সিলেটের গণসমাবেশ ঘিরে মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ততা, আমার দীর্ঘ ৩৮ বছরে বিএনপির রাজনীতিতে এমনটা দেখিনি। যেদিন গণপরিবহন ধর্মঘট ডাকবে, তার আগের দিন হবিগঞ্জের মানুষ সিলেট গিয়ে অবস্থান নেবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দূরবর্তী জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের আগেই সিলেটে আসতে বলা হয়েছে। তাদের থাকা-খাওয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সমাবেশ আয়োজনে সহযোগিতা করবে বলে মনে করছি। সমাবেশ সফল করতে সব রাজনৈতিক দল ও পুলিশের সহযোগিতা চাই আমরা। তবে বাধাবিপত্তি এলেও জনসমাগম ঠেকানো যাবে না।’
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এখন বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীর টার্গেট ১৯ নভেম্বরের বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করা। কোনো বাধাবিপত্তিতে জনজোয়ার ঠেকানো যাবে না।
আমাদের সময়ের সিলেট ব্যুরো জানায়, জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে গতকাল সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফ জানান, বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। প্রবাসে থাকা নেতাকর্মীরাও সহযোগিতা করতে যোগাযোগ রাখছেন।
এদিকে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে মেয়র একচোখা নীতি অবলম্বন করছেন বলে অভিযোগ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সমাবেশের আগে রাতের আঁধারে সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বালু মাটি ভরা হয়েছে বলে শুনেছি। এ ছাড়া যে হারে যত্রতত্র বিলবোর্ড-ব্যানার লাগানো হয়েছে, তাতে নগরীর সৌন্দর্যহানি হচ্ছে। অন্য দল হলে মেয়র নিজেই সিটি করপোরেশনের কর্র্মীদের দিয়ে সেগুলো অপসারণ করতেন। কিন্তু বিএনপির সমাবেশ বলে মেয়র নিজেই বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড লাগাচ্ছেন।’