কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সুনামগঞ্জ জেলার ১৩টি ইউনিটের সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ সোমবার থেকে। উপজেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণায় নতুন কমিটি ও নেতৃত্ব বাছাইয়ের লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে চাঙ্গা হয়েছেন নেতাকর্মীরা। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ ও তদবির-লবিং করতেও দেখা যাচ্ছে। বিদ্রোহীরা দৌড়ঝাঁপ করলেও এবারের সম্মেলনে তারা খুব বেশি গুরুত্ব পাবেন না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে সম্মেলন প্রাঙ্গণে আসতে পারলেও বক্তৃতার সুযোগ পাবেন না এমন সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। এ বিষয়ে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, দলের আপাত সিদ্ধান্ত- যারা বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তারা পদ পাবেন না। তবে সম্মেলন-সমাবেশে আসতে পারবেন, বক্তৃতা শুনতে পারবেন।
আজ সোমবার জেলার প্রথম উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের দিরাই উপজেলায়। পরদিন ১৫ নভেম্বর পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের নিজ উপজেলা শান্তিগঞ্জে হবে সম্মেলন। এ ছাড়া ১৬ নভেম্বর পরিকল্পনামন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা জগন্নাথপুর উপজেলা ও পৌরসভা, ১৭ নভেম্বর তাহিরপুর, ১৮ নভেম্বর জামালগঞ্জ, ১৯ নভেম্বর ছাতক উপজেলা ও পৌরসভা, ২০ নভেম্বর দোয়ারাবাজার, ২১ নভেম্বর ধর্মপাশা, ১ ডিসেম্বর শাল্লা ও ২ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ও সুনামগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৯ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন দলীয় প্যাডে জেলার ১৩ ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হতেই উপজেলা কমিটির সম্ভাব্য নেতৃত্ব নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। উপজেলার নেতৃত্ব পেতে আগ্রহীরা দৌড়ঝাঁপ করেছেন। বিশ^ম্ভরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার সম্মেলন আপাতত হবে না। ২০১৯ সালের ৮ ও ১০ নভেম্বর এই দুই উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করা হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিরাই উপজেলায় সভাপতি পদে আলতাব উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সুহেল আহমদ, সাবেক পৌর মেয়র আজিজুর রহমান বুলবুল ও মোশাররফ মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রদীপ রায়, অ্যাডভোকেট আজাদুল ইসলাম রতন, ইয়াওর মিয়া, অ্যাডভোকেট অভিরাম তালুকদার, হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী লাভলু, মাসুদ চৌধুরীর নাম আলোচনায় আছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির সভাপতি আবদুল হেকিম, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল আলম নিক্কু, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন দোলন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে হাসনাত হোসাইন, ইকবাল হোসেন, মাসুদ মিয়া ও ওবায়দুর রহমান কুবাদের নাম আলোচনায় আছে।
জগন্নাথপুর উপজেলায় সভাপতি পদে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, আকমল খান, রেজাউল করিম রিজু, নুরুল ইসলাম ও হারুন রশিদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মিজানুর রশিদ ভুঁইয়া, আবুল হাসান, সিরাজ উদ্দিন মাস্টার ও মিন্টু রঞ্জন ধরের নাম আলোচনায় আছে।
তাহিরপুর উপজেলায় সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আবুল হোসেন খান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহার হোসেন আখঞ্জি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অমল কর ও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদকে নিয়ে আলোচনা চলছে।
জামালগঞ্জ উপজেলায় সভাপতি পদে মোহাম্মদ আলী, আবদুল মুকিত চৌধুরী ও এম নবী হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ, এহসানুল করিম পারভেজ ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিসবাহ্ উদ্দিনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
ছাতক উপজেলায় সভাপতি পদে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহিদ মজনু, আজমল হোসেন সজল, আওলাদ আলী রেজা, এবং সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাদাত লাহীন, আফজাল হোসেন ও সৈয়দ আহমদ এবং ছাতক পৌরসভায় সভাপতি পদে পৌর কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী ও জয়নাল আবেদীন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সুমন মিয়া চৌধুরী ও প্রণয় কুমার আচার্য্যর নাম আলোচনায় আছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলায় সভাপতি পদে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীক, ফরিদ আহমেদ তারেক ও শামীমুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল খালিক ও হাবিবুর রহমান শেখ চানের নাম আলোচনায় আছে।
ধর্মপাশায় সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, রফিকুল ইসলাম, আবদুল হাই ও শামীম আহমদ বিলকিস এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শামীম আহমদ মুরাদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনের নাম আলোচনায় আছে।
শাল্লা উপজেলায় সভাপতি পদে অলিউল হক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলামিন চৌধুরী, আবদুস ছাত্তারের নাম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে কামরুল হাসান চৌধুরী, কাজল বরন চৌধুরী, বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল, রঞ্জিত কুমার দাস, আবুল লেইছ চৌধুরী, দীপু রঞ্জন দাসের নাম আলোচনায় রয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আবুল কালাম, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি সুবীর তালুকদার বাপ্টু, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন ও প্রদীপ পাল নিতাই এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ঝুটন পুরকায়স্থ, জেলা যুবলীগ নেতা সবুজ কান্তি দাস, জাকির হোসেন শাহীন, অ্যাডভোকেট শামীম আহমদ ও বকুল তালুকদারের নাম আলোচনায় আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তারিখ নির্ধারণ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবন্দের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জেলার সকল ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের শুরু হবে। সম্মেলন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বাছাই করা হবে।’