রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। বাড়তি দামেও অনেক সময় বাজারে মিলছে না তেল-চিনি-আটার মতো ভোগ্যপণ্য। দাম বাড়ানোর জন্য বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে মিল মালিকরা। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। প্রতিদিনই খাদ্য তালিকা কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আবার বাড়তি দামেও মিলছে না চিনি, সয়াবিন তেল, আটা ও ময়দা। ক্রেতারা কোনো একটি দোকানে আটা-ময়দা পেলেও হয়তো চিনি পাচ্ছেন না। আবার কোথাও গিয়ে চিনি মিললেও সেখানে নেই সয়াবিন তেল কিংবা আটা। আবার কোথাও এসব পণ্যের মোড়কজাত দু-একটি প্যাকেট থাকলেও নেই খোলা পণ্য। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি সঙ্কট সয়াবিন তেলের।
খিলগাঁও বাজারের মুদি বিক্রেতা সোহেল বলেন, কয়েক দিন থেকে কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা আসছেন না। মাঝেমধ্যে এলেও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দিতে পারছেন না। বিশেষ করে তেল দেয়া প্রায় বন্ধ রেখেছে কোম্পানিগুলো। যাদের কাছে আগের কেনা তেল রয়েছে, তারা কিছু কিছু করে বিক্রি করছেন এখন। একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল।
বাসাবো বাজারের ক্রেতা জাহিদুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে যা বাজার করেছি তার থেকে প্রতিটি জিনিসের দামই বেড়ে গেছে। বেতন তো আর বাড়েনি। বাজারের তালিকা নিয়ে আসলেও সে পরিমাণ পণ্য কিনতে পারছি না। খাদ্যতালিকা থেকে কিছু না কিছু প্রতিদিনই কাটছাট করতে হচ্ছে। টাকা দিয়েও তেল-চিনি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা শহরে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে যাবে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে মূলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। বরবটির কেজিথ৮০ টাকা, ধুন্দুলের কেজি ৬০ টাকা। শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। বাজারে কাঁচা মরিচের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। শুকনা মরিচের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে, কচুর লতি ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার পিস ৪০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ছোট পাতা কপির পিস ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০, চিচিঙ্গা ৭০, পটোল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাট শাকের জোড়া আঁটি ২৫ টাকা, কলমি শাক জোড়া আঁটি ২০ টাকা, কচুর শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, মূলার শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা, লাল শাকের জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা, শাপলা ডাটা ১৫ টাকা। অন্যদিকে মাছ-মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। কমেনি ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দামও।
বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা। এ ছাড়া বেড়েছে চিনির দাম। এক কেজি খোলা চিনি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের ১০০ থেকে ১০৫ টাকার মধ্যে ছিল। যদিও সরকার নির্ধারিত চিনির দাম এর থেকে অনেক কম। দেশি মসুরের ডালের কেজি ১৩০ টাকা। ভারতীয় মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। এ ছাড়া ভোজ্যতেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা।
বাজারে ছোট সাইজের রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও টাটকিনি, টেংরা ও মাঝারি আকারের চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারের কম দামের মাছ হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়া ও পাঙাশের দামও বেড়েছে। বড় আকারের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজিতে, আর একটু ছোট পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে। এসব মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
পাবদা মাছ (বড়) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ছোট পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া বোয়াল, কই, শিং মাছের দাম বাড়ায় সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। প্রতি কেজি কই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, কাতল ৩৮০ টাকা, শোল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।