বহুল আলোচিত বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং অংশের ঢাকামুখী দুটি লেন সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। চালু হওয়া এই অংশ দিয়ে আপাতত ঢাকামুখী যানবাহন চলাচল করবে। বিআরটির ডেডিকেটেড বাস এলে তখন অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে সেগুলোও চলাচল করবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রবিবার সকালে ওই দুই লেন উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি কমাতে আপাতত আংশিক খুলে দেওয়া হলো। এ প্রকল্প শেষ হলে দুর্ভোগ কমবে। প্রকল্পটি দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ নিয়ে সমালোচনার শেষ ছিল না। যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল অন্তহীন। অনেক যাত্রী বিমানের ফ্লাইটও মিস করেছেন।
বিআরটি প্রকল্প সদরঘাট পর্যন্ত নেওয়ার প্রস্তাব ছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সে প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ী পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গীর চেরাগ আলী পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার উড়াল সড়ক ও ৬টি উড়াল সেতু রয়েছে।
চীনের তিনটি এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। এর মধ্যে উড়াল সড়ক ও নিচের সড়ক নির্মাণের কাজ পেয়েছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি), জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোঅপারেটিভ। আর গাজীপুরে বিআরটির ডিপো নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে দেশীয় কোম্পানি সেল-ইউডিসি।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী বছর মে থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি নবনির্মিত ১০০টি সেতু উদ্বোধন করবেন। মন্ত্রী বলেন, সাড়ে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বিআরটি (গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় মোট ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জিওবি ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা এবং গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) এবং স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বিমানবন্দর থেকে আজমপুর এবং টঙ্গী কলেজ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ, বিআরটি লেন, ৭টি ফ্লাইওভার, ১৯ টিবিআরটি স্টেশন, ২৫ কিলোমিটার ড্রেন, ২টি টার্মিনাল এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন আন্ডার গ্রাউন্ড পথচারী টানেল নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এ অংশের অগ্রগতি সাড়ে ৮২ শতাংশ।
আজমপুর হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গী কলেজ পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ, সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড বিআরটি লেন, ১০ লেনের টঙ্গী সেতু এবং ৬টি বিআরটি স্টেশন নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এসব কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ফিডার রোড নির্মাণ, গাজীপুরে বিআরটি বাস ডিপো নির্মাণ, ট্রাফিক কন্ট্রোল ইকুইপমেন্ট ক্রয় এবং সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি স্থাপনের কাজ চলছে।
টঙ্গী ফ্লাইওভারের ঢাকামুখী ২টি লেন যানচলাচলের উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিনউল্লাহ নুরী, সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো. মনজুর হোসেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান, গাজীপুর নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান প্রমুখ।