মানুষের আয় কমছে বাড়ছে ব্যয়

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


বাংলাদেশের মানুষের সামগ্রিক আয় বৃদ্ধির হার অব্যাহতভাবে কমছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। সরকারি চাকরির মতো কিছু ক্ষেত্রে নিয়োজিত ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ের অধিকাংশ খাতে নিয়োজিত কর্মজীবী ও শ্রমজীবীদের আয় কমছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত সেপ্টেম্বর মাসের সর্বশেষ প্রকাশ হওয়া ভোক্তামূল্য সূচকে জীবনযাত্রার ব্যয় যেখানে ৯.১০ শতাংশ বেড়েছে সেখানে একই মাসে মজুরি বা আয় বেড়েছে ৬.৮১ শতাংশ। এর আগের জুলাই মাস থেকেই আয়ের তুলনায় সামঞ্জস্যহীনভাবে ব্যয় বাড়তে শুরু করে। জুলাই মাসে মজুরি যেখানে ৬.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৪৮ শতাংশ। এরপরের আগস্ট মাসে জীবনযাত্রার ব্যয় তথা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায় ৯.৫২ শতাংশ আর মজুরি বৃদ্ধি পায় ৬.৮০ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদেও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির তুলনায় আয় বৃদ্ধির হার কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে মজুরি বৃদ্ধি পায় ৬.০৬ শতাংশ আর একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬.৩১ শতাংশ। অন্য দিকে ২০১০-১১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে ৯১.৮ শতাংশ। এই একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৯৫ শতাংশ। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ও এর আগে মজুরি বৃদ্ধির সাথে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির অনুপাত কাছাকাছি ছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.১২ শতাংশ বাড়লেও মজুরি বেড়েছে ৫.২৯ শতাংশ। এর আগের বছর মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছিল ৬.৩৫ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায় ৫.৬৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে দেখা যায়, সেবা খাতের মজুরি বৃদ্ধির যে হার সেই তুলনায় কৃষি ও শিল্পে মজুরি কম বেড়েছে। গত ১২ বছরে সেবা খাতের মজুরি বেড়েছে ৯৯.৪২ শতাংশ। আর একই সময়ে কৃষিতে ৯২.২১ এবং শিল্পে ৮৭.৮৩ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি পায়।

আবার বিভাগভিত্তিক মজুরি বৃদ্ধির হারেও ব্যবধান লক্ষ করা যায়। ঢাকা বিভাগে গত অর্থবছরে সোয়া ৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে রাজশাহী বিভাগে ৫.৮৮ শতাংশ, রংপুরে ৮.১৪ শতাংশ, খুলনায় ৬.১০ শতাংশ, বরিশালে ৬.৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫.৭০ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ৬.১০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর, ’২২ মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ঢাকায় ৫.২৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৬.৯৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৬.৬৩ শতাংশ, রংপুরে ১০.৯২ শতাংশ, খুলনায় ৬.৩৬ শতাংশ, বরিশালে ৮.১২ শতাংশ এবং সিলেটে ৬.৫৬ শতাংশ।

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামে অনেক ব্যবধান লক্ষ করা যায়। সেপ্টেম্বর, ’২২ মাসে জাতীয় পর্যায়ে যখন মূল্যস্ফীতি ৯.১৩ শতাংশ তখন শহরাঞ্চলে এ হার ছিল ৮.৬৬ শতাংশ আর গ্রামীণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৪৮ শতাংশ।

গ্রাম ও শহরে মূল্যস্ফীতির এই ব্যবধানে গ্রামীণ দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাওয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সাধারণভাবে গ্রামাঞ্চলে মূল্য বাস্কেটে খাদ্যের অনুপাত থাকে বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় গ্রামীণ মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *