বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ নিয়ে ভোজনরসিক এবং রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন খবর নিয়ে এসেছে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। দক্ষিণাঞ্চলে বলেশ্বর নদ ঘিরে ইলিশের নতুন একটি প্রজনন ক্ষেত্র করার প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই নদের ৫০ কিলোমিটারে প্রায় সাড়ে ৩০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চল থাকবে এই প্রজনন ক্ষেত্রের আওতায়।
কর্মকর্তারা বলছেন, পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ, প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা, ভৌগোলিক অবস্থানসহ ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই রয়েছে এই বলেশ্বর নদে। প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে এটি হবে ইলিশের পঞ্চম প্রজনন ক্ষেত্র। এটি বাস্তবায়ন হলে বছরে ৫০ হাজার টন বাড়তি ইলিশ উৎপাদন হবে। মোট ইলিশ, উৎপাদন গিয়ে দাঁড়াবে ছয় লাখ টনের বেশি। এর আগে ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার বিশিষ্ট মায়ানী-মীরসরাই, পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট-তজুমুদ্দিন, গন্ডামারা-বাঁশখালী ও লতাচাপালি-কলাপাড়া এলাকার মোহনা অঞ্চলে ইলিশের আরও চারটি প্রজনন ক্ষেত্র শনাক্ত করা হয়।
বিএফআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা বলছেন- বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বলেশ্বর ও বলেশ্বর নদের মোহনা অঞ্চল মিলিয়ে গড়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৩৪৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ইলিশের পঞ্চম প্রজনন ক্ষেত্র করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এতে বছরে গড়ে প্রায় ৮০০ কোটি নতুন লার্ভি ইলিশ এবং ৩৫০ কোটি অন্যান্য মাছের পোনা মৎস্য পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হবে
বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বর্তমান সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিএফআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা গত তিন বছরের গবেষণায় বলেশ্বর নদে ইলিশের ব্যাপক প্রজননের সম্ভাবনার প্রমাণ পেয়েছেন। বিএফআরআই এর আগে যে চারটি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে, তার সঙ্গে এই এলাকার জলজ পরিবেশ এবং মাছের ডিম ছাড়ার বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য রয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রজনন ক্ষেত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা গেলে ইলিশের উৎপাদন বছরে আরও ৫০ হাজার টন বাড়বে। এ ছাড়া ইলিশের সহনশীল আহরণ মাত্রা ৭ লাখ ২ হাজার টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বর্তমান উৎপাদন থেকে আরও প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টনের অধিক ইলিশ আহরণ করা যাবে।
বিএফআরআইয়ের গবেষণার ফল বলছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বলেশ্বর নদের মোহনা অঞ্চলে ইনস্টিটিউট গবেষণা চালায়। গবেষণায় তিনটি বিষয় মিলেছে। এর মধ্যে প্রজননক্ষম ইলিশের আধিক্য, ইলিশের বসবাসের অনুকূল পরিবেশ এবং লার্ভি অর্থাৎ ডিম ফুটে বেরোনো বাচ্চা ইলিশ এবং প্রচুর জাটকার সন্ধান মিলেছে।
জানা যায়, তিন বছরের গবেষণার ফল অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রজনন এলাকায় বছরওয়ারী ডিমওয়ালা মাছের সংখ্যা যথাক্রমে ৬৫, ৬৯ এবং ৫১ শতাংশ। ডিম ছাড়ারত মাছের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৯, ৫৫ এবং ৪৩ শতাংশ এবং ডিম ছেড়ে দেওয়া মাছের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৫, ৫০ এবং ৪০ শতাংশ। এ ছাড়াও প্রজননোত্তর ইলিশ মাছের হার যথাক্রমে ৪৫, ৫০ এবং ৪০ শতাংশ শনাক্ত করা হয়েছে।
বিএফআরআইয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ইলিশের বার্ষিক উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন। এই মুহূর্তে দেশে মোট মাছের উৎপাদনের ১২ দশমিক ২১ শতাংশ ইলিশ, জিডিপিতে যার অবদান বছরে এক শতাংশের বেশি।