মহান আল্লাহ তায়ালা মহান সৃষ্টিকর্তা। তিনি অগণিত প্রাণি সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সব প্রাণির রিজিকের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া আসমান, জমিন, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর-মহাসাগর সৃষ্টি করেছেন। তিনি বিশ্বজগতের মালিক। ডেইলি বাংলাদেশ
কুরআন-হাদিসের আলোকে যেসব কারণে রিজিকের সংকট সৃষ্টি হয় তা আলোচনা করা হলো।
রিজিক মানে শুধু খাদ্য সামগ্রী নয়, বরং জীবন-উপকরণের সবকিছু। অর্থাৎ সব প্রাণীর জীবন-উপকরণের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই গ্রহণ করেছেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, জমিনে বিচরণকারী যত প্রাণী আছে, সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপরে। (সুরা হুদ: আয়াত ৬)
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি দয়ালু, যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন, তিনি প্রবল পরাক্রমশালী। ( সুরা শুরা: আয়াত ১৯)
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে দিয়েছেন ; আল্লাহ তায়ালা যদি তার সব বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা (রিজিক) সে পরিমাণ অবতীর্ণ করেন। (সুরা শুরা: আয়াত ২৭)
হজরত সাখর আল গামিদী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন -হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মাতকে ভোরের বরকত দান করুন। তিনি রাসুল (সা.) কোনো ছোট বা বড় বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে (ভোরে) পাঠাতেন। ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৬০৬)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ ফরমান, রাতের বেলা শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের মাথায় একটি দড়ি দিয়ে তিনটি গিরা দেয়। সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে একটি গিরা খুলে যায়। সে উঠে ওজু করলে আরেকটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর সে যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন সব গিরা খুলে যায়। ফলে সে প্রশস্ত মনে হৃষ্টচিত্তে ভোরে উপনীত হয় এবং কল্যাণপ্রাপ্ত হয়। আর সে যদি এরূপ না করে, তবে তার ভোর হয় অলসতা এবং অপবিত্র মন নিয়ে। ফলে সে কল্যাণ লাভ করতে পারে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩২৯)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন -আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে (ইবাদত অপেক্ষা দুনিয়ার পেছনে দৌড়ালে) আমি তোমার দুহাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন দূর করা হবে না।’ (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস ২৪৬৬)।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন -‘এবং যারা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ দেন। এরপর তাদের বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করে দেন।’ (সূরা মুহাম্মাদ : আয়াত ২২-২৩)।
হজরত আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন -মহান আল্লাহ বিদ্রোহী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর মতো; অন্য কাউকে দুনিয়াতে অতিদ্রুত আজাব দেওয়ার পরও আখিরাতের আজাবও তার জন্য জমা করে রাখেননি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৯০২)।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। কিছুতেই অপচয় করো না। নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। তুমি যদি তাদের (অভাবী আত্মীয়, মিসকিন ও মুসাফির) পাশ কাটাতে চাও এ জন্য যে, তুমি এখনো নিজের জন্য তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের সন্ধানে নিযুক্ত যা তুমি প্রত্যাশা করো, এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলো। তোমার হাতকে তোমার গলার সঙ্গে বেঁধে (সহযোগিতা থেকে একেবারে বিরত) দিও না, আর তা একেবারে প্রসারিত (নিজের প্রয়োজন থাকার পরও) করেও দিও না। তা করলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে। নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনি তার বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন এবং সব কিছুই দেখেন।’ (সূরা ইসরা : আয়াত ২৬-৩০)।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ সুদকে ক্ষয় (সমূলে/নিকৃষ্ট ধ্বংস) করেন এবং দানকে বর্ধিত (রিজিকে বরকত) করেন। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৬)।
মানবতার মুক্তির কাণ্ডারি বিশ্বনবী (সা.)ও হাদিসে এরূপ বর্ণনা করে গিয়েছেন। ‘যে জাতির মধ্যে সুদ প্রসারিত হয়, তারা অবশ্যই দুর্ভিক্ষে (নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব) নিপতিত হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)।