বরগুনার তালতলীতে সদ্য অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘টাকা নিয়ে ভোট না দেওয়ায়’ এক নারী ইউপি সদস্য ও তার স্বামীকে জনসম্মুখে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য নূরজাহান বেগম, তার স্বামী মাসুদ পিয়াদাসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনই জেলে। তারা হলেন নূর হোসেন, রিয়াজ ও সামসুল। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার সোনাকাটা ইউপির লাউপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদ্য শেষ হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলীতে সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রার্থী হন দেলোয়ারা হামিদ। নির্বাচনে উপজেলার ৯৪ জন জনপ্রতিনিধি ভোট দেয়। এতে দেলোয়ারা হামিদ পান ১২টি ভোট। এ ঘটনায় তার সন্দেহ হয় সোনাকাটা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরজাহান বেগমকে।
গতকাল বিকেলে সোনাকাটা ইউপিতে জেলেদের ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এ সময় নূরজাহান বেগম বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে একপর্যায়ে পরাজিত প্রার্থী দেলোয়ারা হামিদের নাতি হৃদয় ফকির তাকে কটূক্তী করেন। বলতে থাকেন, ‘টাকা নিয়ে আমাদের ভোট দাওনি।’
এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে ইউপি চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেন। কিন্তু কিছু সময় পরে হৃদয় ফকিরের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন লোক এসে ইউপি সদস্য নূরজাহান বেগম ও তার স্বামীর ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় নূরজাহান বেগম ও তার স্বামী মাসুদ পিয়াদা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আহত হয় হামলা ঠেকাতে এগিয়ে আসা তিন জেলেও। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রাহিমা বেগম বলেন, ‘জেলা পরিষদ সদস্য দেলোয়ারা হামিদ নির্বাচনে জয়ী হতে আমাদের পরিষদের সবাইকে ৫ হাজার করে টাকা দেয়। এই টাকা আমরা কেউ নিইনি। তবুও পরিষদের অফিসে রেখে যায়। এর জের ধরে আমার সহকর্মীকে রাস্তায় ফেলে জনসম্মুখে মারধর করা হয়েছে। আমরা এই হামলার বিচার চাই।’
আহত ইউপি সদস্য নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ইউপি সদস্য করার জন্য হৃদয় ফকির আমার কাছে তিন লাখ টাকা চেয়েছিলেন। টাকা দিতে না চাওয়ায় আমি ও আমার স্বামীর ওপর হামলা চালানো হয়। ওরা আমার গলার চেন, হাতের আংটি ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া আমার স্বামীর পকেট থেকে নগদ ১২ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।’
সোনাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে দেলোয়ারা হামিদকে ভোট না দেওয়ায় তার নাতি হৃদয় ফকির আমার পরিষদের এক সদস্যকে নিয়ে কটুক্তি করেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে বিষয়টির সমাধান করে দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতে ওই প্রার্থী পরিষদে এসে সব ইউপি সদস্যর জন্যে ৫ হাজার টাকা রেখে যায়। সেই টাকা কেউ নিয়েছে, কেউ নেয়নি। আমি তাদের টাকা নিয়ে যেতে বলেছিলাম। এর জের ধরে আমার সহকর্মীকে জনসম্মুখে মারধর করাটা দুঃখজনক। এই হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত জনসেবা ছাড়া পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হৃদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
তবে অভিযুক্ত প্রার্থী দেলোয়ারা হামিদ বলেন, ‘আমাকে নির্বাচনে ভোট দেবে বলে ওই ইউনিয়নের সদস্যদের ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে ভোট দেয়নি। এজন্য আমার নাতি ওই সদস্যের কাছে টাকা ফেরত চেয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হওয়ায় হৃদয়কে জুতাপেটা করতে চান তিনি। পরে ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টির সমাধান করে দেয়। তবে চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার পর ওই সদস্যের স্বামীর সঙ্গে হৃদয়ের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় সে ৭-৮টি কিল ঘুষি দেয়। তবে গলার চেন, আংটি ও মোবাইল ফোন- এগুলোর কিছুই নেয়নি হৃদয়।’
এ বিষয়ে তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’