গাজীপুর: নির্বাচিত হওয়ার ৮ মাসের মধ্যে নানা কারণে আলোচিত শ্রীপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সমালোচনায় পড়ে গেছেন। গতকাল একজন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বাকী দুজনের মধ্যে একজন নদীর জমি দখল করে নিজেই নিজের জবদখলীয় সীমানাপ্রচারীর ভেঙ্গে পরোক্ষ্যভাবে অপরাধ স্বীকার করেছেন। আরেকজন রাস্তা কাটার লিখিত অনুমতি দিয়ে গণমাধ্যমকে রিপোর্ট না করার অনুরোধ করছেন।
জনপ্রতিনিধি নাগরিক ও রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করার পরিবর্তে যদি বিনষ্ট করেন তখন নৈতিক স্খলনের পাশাপাশি শপথও ভঙ্গ হয়। তিন জনের মধ্যে দুই জন আওয়ামীলীগের নির্দেশ অমান্য করে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করায় দল থেকে বহিঃস্কারও হয়েছেন। কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে তাদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহনের সুযোগই কি অপরাধ করতে উৎসাহ দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বহিঃস্কৃতদের দলে ফিরিয়ে আনার আগে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করার সুযোগ তৈরী করে দেয়াকে অনেকে বহিঃস্কৃতদের প্রতি দলীয় মদদ বলে মনে করছেন। আর এই সকল মদদ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল বলেও জল্পনা কল্পনা চলছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, বরমী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। অভিযোগটি তদন্তের জন্য গঠিত সরকারী তদন্ত দল ভয়ে তদন্ত কাজ ফেলে চলে আসে। এই স্থিরচিত্র ধারণ করতে গিয়ে গুরুতর আহত ও অপহরণ হয় সাংবাদিক। পুলিশ সাংবাদিককে উদ্ধার করার পর সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে পুলিশ মামলা নেয়।
গোসিংগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গা দখল করে বলে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ হয়। এই রিপোর্ট প্রকাশের পর সরকারী তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পরদিন চেয়ারম্যান নিজেই নিজের দখলীয় সীমানা প্রচারী ভাঙেন।
আরেক চেয়ারম্যান এলজিইডির রাস্তা কাটার অনুমতি দিয়ে সমালোচনায় পড়েন। একই সঙ্গে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মানে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে ওই চেয়ারম্যানের ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ হয়। পুলিশ অভিযোগ তদন্তও করে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টের অভিযোগ এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আওয়ামীলীগ দলীয় প্রধানের নির্দেশ অমান্য করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিঃস্কার হয়, তারা কি করে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করেন। দলীয় প্রধানের নির্দেশ অমান্য করার কোন সুযোগ না থাকার পরও কার বা কাদের নির্দেশে বহিঃস্কৃতরা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করছেন তা বোধগম্য নয়। এই ধরণের শৃঙ্খলাভঙ্গ অভিযুক্তদের অপরাধ করতে উৎসাহ দিচ্ছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। দলীয় প্রধানের নির্দেশের বাইরেও নির্দেশ থাকতে পারে, তা রাজনীতিবিদরা মনে করেন না।
সুতরাং এখন থেকেই সতর্ক না হলে অসাংগঠনিক কর্মকান্ড ও দলীয় মদদ, আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগ সরকারের জন্য বড় ধরণের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই রাজনীতিবদিদের উচিত দলীয় শৃঙ্খলা মেনে কাজ করা। না হয় এই ধরনের অপরাধ দমানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।