নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা : স্ত্রীকে নদীতে ফেলে হত্যার অভিযোগে মাহমুদুর রহমান মাসুম নামের এক ব্যক্তির নামে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন নিহত মারজানা আক্তার কেয়ার বাবা আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের ইখতিয়ার হোসেন।
নিহতের বাবা ইখতিয়ার হোসেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, চার বছর আগে তার মেয়ে মারজানা আক্তার কেয়ার সঙ্গে কুমিল্লা সদরের দৌলতপুর এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে মাসুদুর রহমান মাসুমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাত মাসুম। তাদের সংসারে আড়াই বছরের একটি ছেলে আছে। ঢাকার বাসায় থাকাকালে ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর কেয়া আদাবর থানায় একটি নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। ১০ অক্টোবর পুলিশ মাসুমকে আটক করে কারাগারে পাঠায়।
ওই বছরের ১৫ অক্টোবর উভয় পক্ষের সমঝোতার পর মাসুম জামিনে বেরিয়ে আসেন। এর পর থেকেই কেয়াকে হুমকি দিতে থাকেন মাসুম। পরে ২৪ অক্টোবর ঢাকার দারুস সালাম থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন কেয়া। পরে আড়াই বছরের ছেলেসন্তান আদিয়ানকে নিয়ে কেয়া বাবার বাড়ি চলে আসেন। ২০১৫ সালের ১৪ মে কেয়া তার ছেলেকে নিয়ে কুমিল্লা পুলিশ লাইন এলাকায় আসেন। এ সময় তার স্বামী ও সঙ্গীরা কেয়াকে অপহরণ করে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকার দিকে নিয়ে যায়। এরই মধ্যে কেয়া দারুস সালাম থানার এসআই শহীদুল ইসলামকে ফোনে জানান যে, তার স্বামী ও সঙ্গীরা মারধর করে তাকে ঢাকার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। শহীদুল ইসলাম ঘটনাটি কেয়ার ভাই হামিম হোসেনকে জানান। পরে কেয়ার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে কেয়ার পরিবার টেলিভিশনের সংবাদে দেখতে পায়- মেঘনা নদী থেকে একটি শিশু উদ্ধার করা হয়েছে এবং এক নারী ডুবে গেছেন। এ খবর দেখে তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, কেয়া এবং তার ছেলে আদিয়ানকে মেঘনা নদীতে হত্যার উদ্দেশে ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয় পাথর শ্রমিক মকবুল হোসেন ঘটনাটি দেখে আদিয়ানকে নদী থেকে উদ্ধার করে। কেয়া পানিতে তলিয়ে যান। ঘটনার এক দিন পর কেয়ার লাশ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করেন।
গত ১৮ মে রাতে কেয়ার বাবা ইখতিয়ার হোসেন বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামি করে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় জড়িত কোনো আসামিকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
দারুস সালাম থানার এসআই শহীদুল ইসলাম জানান, ১৪ মে সকালে কেয়া তাকে ফোন করে অপহরণের কথা জানিয়েছিলেন।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি খোরশেদ আলম জানান, মারজানা আক্তার কেয়াকে হত্যার অভিযোগে তার বাবা ইখতিয়ার হোসেন বাদী হয়ে মাহমুদুর রহমান মাসুমসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান মাসুমের মা মমতাজ বেগম বলেন, ‘মাসুম ও কেয়ার কয়েক মাস আগে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। নদীতে কেয়া কীভাবে পড়েছে, তা আমরা জানি না। ’