শ্রীপুরে আলোচিত তিন চেয়ারম্যান: গোসিংগায় অপরাধের দায় স্বীকার চেয়ারম্যানের!

Slider টপ নিউজ

গাজীপুর: নানা অনিয়মের কারণে আলোচিত গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তিন জন চেয়ারম্যান। বছর না পেরোতেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হালে পানি পাচ্ছে। এরই মধ্যে বরমী ইউপির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মেম্বারদের অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি আর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবী করে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। অভিযুক্ত তিন চেয়ারম্যানের একজন গোসিংগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান শাহীন। তিনি সরকারী জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মান করেছেন। পাশাপাশি শীতলক্ষ্যা নদীর তীর দখল করতে করেছিলেন পাকা স্থাপনা। বিষয়টি গণমাধ্যেমে প্রকাশ হলে উপজেলা প্রশাসনের তদন্তের পর চেয়ারম্যান নিজেই তার স্থাপনা ভেঙে দিয়েছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, চেয়ারম্যান নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন যা বিচার যোগ্য বটে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিষদের পাশে বন বিভাগের বিট অফিসের সামনে একটি করাতকল অবৈধভাবে স্থাপন করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিট অফিস এই করাত কলকে অবৈধ বললেও চেয়ারম্যানের প্রভাবে তা বন্ধ করতে পারছেন না।

একটি গোপন সূত্র জানায়, গোসিংগার চেয়ারম্যান ১% এর টাকা দিয়ে একটি এলিয়ন গাড়ি ক্রয় করেছেন যার মূল্য ৩০ লক্ষাধিক টাকা। সূত্র বলছে, চেয়ারম্যান হওয়ার পরও সাইদুর রহমান শাহীন একটি পুরাতন মোটরসাইকেল ব্যবহার করতেন। ৮ মাসের মধ্যেই তিনি একটি নতুন গাড়ি ক্রয় করেছেন যা এখনো জনসমক্ষে তেমনভাবে দেখা যায় না।

নদী দখলের শাস্তি

বাংলাদেশে নদী দখল ও দূষণের শাস্তি বৃদ্ধি করে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। ইতোমধ্যেই ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০২০’ এর খসড়া তৈরী করেছে কমিশন। আইনের খসড়ায় নদীর দখল ও দূষণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

২০১৩ সালের নদী রক্ষা কমিশন আইনে এই ধরনের অপরাধের জন্য কোনো শাস্তি নির্ধারিত ছিল না। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, নদী দূষণ ও দখল রোধে সুপারিশ করা ছাড়া নদী রক্ষা কমিশনের কোনো দায়িত্ব নেই। তবে প্রস্তাবিত নতুন আইন অনুযায়ী, কমিশন নদী দখল ও দূষণ রোধ এবং নদীর উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেবে। এই নির্দেশনা মানতে সংস্থাগুলো বাধ্য থাকবে। সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। খসড়া আইনে নদী সংক্রান্ত অপরাধের বিচারের জন্য ‘নদী রক্ষা কোর্ট’ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।

বর্তমান আইনে চারটি অধ্যায়ে ২১টি ধারা রয়েছে। আর খসড়া আইনটিতে ১৪টি অধ্যায়ে ১০৮টি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া, শাস্তি সংক্রান্ত তিনটি তফসিল রয়েছে।

এদিকে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো যথাক্রমে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা রক্ষায় উচ্চ আদালত থেকে একাধিকবার নির্দেশনা দেওয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

সরকারী আইন অনুসারে গোসিংগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নদী দখলের জন্য দন্ডিত হলে তাকে চেয়ারম্যান পদটি হারাতে হবে। কারণ অনধিক দুই বছরের দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি জনপ্রতিনিধির জন্য অযোগ্য।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর সপ্তম অধ্যায়ের খ) পরিষদ বা রাষ্ট্রের স্বার্থের হানিকর কোন কার্যকলাপে জড়িত থাকেন, অথবা দুর্নীতি বা অসদাচরণ বা নৈতিক স্খলনজনিত কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হইয়া থাকেন;

(ঘ) অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দোষে দোষী হন অথবা পরিষদের কোন অর্থ বা সম্পত্তির কোন ক্ষতি সাধন বা উহার আত্মসাতের বা অপপ্রয়োগের জন্য দায়ী হন;

তবে তিনি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ যোগ্য হইবেন।

এ বিষয়ে শত চেষ্টা করেও চেয়ারম্যানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চলবে—

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *