ঢাকা: বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম মঙ্গলবার থেকে কমার কথা থাকলেও খুচরা বাজারে তা কার্যকর হয়নি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল।
বুধবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।
দোকানিরা জানিয়েছেন, তেলের মজুদ শেষ হলে ভোক্তারা আগামী সপ্তাহ থেকে দাম কমার সুবিধা পাবেন। তবে ডিলার ও খুচরা দোকানিদের মজুদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোক্তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ মজুদ করা তেলগুলো বেশি দামে কেনা হয়েছে। তাই সেগুলো কম দামে বিক্রি সম্ভব নয়।
বাজার ও পাড়া মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, বোতল জাত সয়াবিন তেল লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৯২ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ থেকে ৯৪৫ টাকায়। একই সঙ্গে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন দাম সমন্বয় হতে কয়েকদিন সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে মিরপুর শেওড়াপাড়ার পাবনা জেনারেল স্টোরের রেজাউল করিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল ডিলার এসে বলে গেছে আগামী সপ্তাহ থেকে কম দামে তেল পাবো। শুধু তাই নয় ডিলারদের কাছে যেমন তেল মজুদ রয়েছে, তেমনি আমরাও সাত দিনের তেল মজুদ করি। এগুলো বিক্রি না হলে নতুন তেল কেনা সম্ভব নয়।
পূর্ব কাজীপাড়ার তেল বিক্রেতা শওকত হোসেন বলেন, দোকানে খুব একটা তেল নেই, যা আছে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনদিন চলবে। এগুলো শেষ না হলে নতুন দামে তেল উঠাবো না।
তিনি বলেন, আগের তেলগুলো শেষ হলেই নতুন দামে তেল নিব ডিলারদের কাছ থেকে। কেননা বেশি দামে কিনে কম দামে তো বিক্রি করা সম্ভব না।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিলার বাংলানিউজকে বলেন, মিলারদের কাছ থেকে আমরা কয়েকদিনের তেল নিয়ে আসি। সব তো একদিনে বিক্রি সম্ভব হয় না। আর আমাদের লাভ সীমিত। তাই মজুদ থাকা তেল শেষ হলেই নতুন দামে তেল দোকানদাররা পাবেন।
অন্যদিকে ভোক্তারা অভিযোগ করে বলেন, কোনো পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন। অনেক ক্ষেত্রে গায়ে লেখা পণ্যের দামও মুছে ফেলেন। কিন্তু কমার ক্ষেত্রে সেটি পুরোটাই উল্টো। এখানে সরকারের উচিত কোনো পণ্যের দাম কমা-বাড়ার ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দেওয়া বা বাজারে কি পরিমাণ পণ্য রয়েছে সেগুলোর দামের সঙ্গে সমন্বয় করা।
মিরপুরের গৃহিণী মমতাজ বেগম বাংলানিউজকে বলেন, বাসায় ভোজ্য তেল শেষ হয়ে গেছে। ৫ লিটার তেল ৯৪০ টাকায় কিনলাম। গতকাল থেকে দাম কমার কথা বলা হলো, কই আমি কয়েকটি দোকান ঘুরেও কম দামে তেল পেলাম না। তবে দাম বাড়ার ঘোষণা থাকলে সেটা সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়ে যায় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
গত সোমবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মোল্লার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৭ টাকা কমছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৭৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের নতুন ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠনের নেতারা ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ঋণপত্র খোলার জটিলতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠক শেষে ভোক্তাদের সুবিধার্থে ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে খোলা সয়াবিনের দাম কমেছে লিটারপ্রতি ১৭ টাকা।
সংগঠনটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম হবে ১৫৮ টাকা। বর্তমানে বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯৪৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ৮৮০ টাকা। যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর করা হবে।
এর আগে, গত ১৭ জুলাই সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কমায় তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। এরপর গত ২৩ আগস্ট আবার সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৭ টাকা বৃদ্ধি করে। দেড় মাসের ব্যবধানে সেই দাম কমানো হলো।