সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও শনিবার (১ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘পরিবর্তিত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সহনশীলতা’।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের প্রবীণ নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং তাদের সুস্বাস্থ্য ও শান্তিপূর্ণ জীবন কামনা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দেশেও আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমি মনে করি এই বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘পরিবর্তিত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সহনশীলতা’ যথার্থ।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রবীণ নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশ করেন।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, প্রবীণদের মর্যাদাপূর্ণ, দারিদ্র্যমুক্ত, কার্যকরী, স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ পারিবারিক ও সামাজিক জীবন নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ এবং পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছে।
বর্তমান (আওয়ামী লীগ) সরকারের প্রথম মেয়াদে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা চালু করা হয় বলে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, এ পর্যন্ত দেশের ২৬২টি উপজেলার শতভাগ বয়স্ক মানুষ এই ভাতার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৫৭ লাখ প্রবীণ নাগরিক বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন।
এছাড়া আত্মীয়-স্বজন ও আশ্রয়হীন প্রবীণদের জন্য আটটি বৃদ্ধাশ্রম তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- সরকারের নেওয়া এই পদক্ষেপগুলো প্রবীণদের কল্যাণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ এবং পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রবীণদের নাগরিক সুবিধা বাড়াতে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গড়ে তোলার যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নে প্রবীণদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়তে চাই। আমাদের সরকার এই লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থা প্রবীণদের কল্যাণে এগিয়ে এলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রবীণ নাগরিকরা এই বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলায় অপরিসীম সহনশীলতা দেখিয়েছেন।
দেশের প্রবীণ নাগরিকদের নিরাপদ রাখতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দিবসটির সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
প্রবীণ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বার্ধক্য সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করা হচ্ছে।
১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসাবে মনোনীত করে। ৬০ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সীদের প্রবীণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ।
এদিকে, দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আলোচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সমাজকল্যাণ সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।