ওপারে গোলাগুলি, এপারে ভয়ে কাঁদছে শিশুরা : সতর্ক অবস্থায় বিজিবি

Slider সারাদেশ


বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দিন দিন সংঘাতের এলাকা বাড়ছে। কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না গোলাগুলি ও গোলাবর্ষণ। মিয়ানমারের গোলাগুলির বিকট শব্দে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক। ভয়ে মাঠে কাজকর্ম প্রায় বন্ধ। অন্যদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)।

উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের আঞ্জুমানপাড়া, পূর্ব ফারির বিল ও বটতলি। সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে হাজার হাজার একর চাষাবাদের জমি, আছে ১৫টির মতো মৎস্য ঘের। এ সবের পাশে দিয়ে বয়ে গেছে পালংখালী খাল। চারদিকে যেন সবুজের সমারোহ। চাষাবাদ, মৎস্য ঘের এবং খালে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। কিন্তু সীমান্ত উত্তেজনায় উৎকণ্ঠা এখন এসব এলাকায়। সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও মর্টারের গোলার বিকট শব্দ ভেসে আসছে প্রতিনিয়ত।

বটতলি গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলি হচ্ছে, আর আমরা এপার থেকে তা দেখছি। কোন স্থানে গোলা মারছে তা তো দেখছি, গতকালকে বেশি গোলা মেরেছে। আগে হেলিকপ্টার থেকে গুলি মেরেছে। কিন্তু গতকাল কী গোলা মেরেছে জানি না, তবে এসবের বিকট শব্দ পুরো এলাকা কেঁপেছে।’

আরেক বাসিন্দা সোয়েব বলেন, ‘গোলাগুলি হচ্ছে, সীমান্তে আগে আমরা যেতে পারতাম। কিন্তু এখন গোলাগুলির কারণে যাচ্ছি না, আতঙ্কে আছি।’

পূর্ব ফারির বিলের সিদ্দিক আহমদ বলেন, ‘বিকট শব্দের কারণে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। আমরা মনে করছি, ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হচ্ছে। আর ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ভয়ে চিৎকার করছে।’

মিয়ানমারের গোলাগুলি ও গোলা বর্ষণের ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়েই আতঙ্ক। গত তিন দিন ধরে জীবিকার একমাত্র উৎস চাষাবাদ, মৎস্য ঘের ও খালে যেতে পারছেন না এলাকার কৃষক, দিনমজুর ও জেলেরা।

মৎস্য ঘেরের শ্রমিক আক্কাস বলেন, ‘মিয়ানমারে যে অবস্থা শুরু হয়েছে, কোনোভাবেই আমরা বাংলাদেশী মানুষ মাছের ঘেরে থাকতে পারছি না।’

বটতলি গ্রামের কৃষক আমির হোসেন বলেন, ‘পাঁচ কানি চাষাবাদ করেছি। কিন্তু চাষাবাদ দেখভাল করার জন্য যাতায়াতের অসুবিধা হচ্ছে, যেতে পারছি না।’

আঞ্জুমানপাড়ার বাসিন্দা জাফর আলম বলেন, ‘ধান চাষ করেছি এবং ঘেরে মাছ চাষও করছি। গোলাগুলির কারণে আমাদের ভয় লাগছে, এখন যেতে পারছি না। নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবিও যেতে বাধা দিচ্ছে, মাছও শিকার করতে পারছি না।’

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জাফরুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমারের আগ্রাসী আচরণে সীমান্ত এলাকার মানুষ এখন চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ছে।‘

উল্লেখ্য, সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিতে উখিয়ায় ১০০ পরিবারের তালিকা ও জায়গা চিহ্নিত করা হলেও এখনো শুরু হয়নি সে প্রক্রিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *