ঢাকা: মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার উপকূলীয় সাগরে ভাসমান পাচার বাংলাদেশিদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও মালয়েশিয়া সরকারের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এগুলো বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজও শুরু করে দিয়েছে সরকার।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সাগরে ভাসমান বাংলাদেশিদের উদ্ধারে সোমবার (১১ মে) আঞ্চলিক দেশগুলোর কাছে আইওএম সহযোগিতা চাওয়ার পর মঙ্গলবার (১২ মে) সচিব ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে তাৎক্ষণিক বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠকে মানবপাচার প্রতিরোধ ও সাগরে ভাসমান বাংলাদেশিদের উদ্ধারে করণীয় নির্ধারণে শিগগিরই জরুরি বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়।
পরের দিন (১৩ মে) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ফের বৈঠকে বসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আগের দিন দফায় দফায় বৈঠক করে।
সূত্র জানায়, মানবপাচার রোধ এবং পাচারকারীদের নৌযানে সাগরে ভাসতে থাকা বাংলাদেশিদের উদ্ধারে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের দিকে এগুতে চায় বাংলাদেশ।
বুধবার (১৩ মে) অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিষয়সহ একাধিক এজেন্ডা থাকলেও এ বিষয়টাতেই জোর দেওয়া হয় বেশি।
এদিকে, যৌথ কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) রাতে মালেশিয়ায় উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। সেখানেও মানবপাচার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।
সূত্রমতে, যৌথ কমিশনের মিটিংয়ের পাশাপাশি মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করে সে দেশের জলসীমায় ভাসমান বাংলাদেশিদের উদ্ধারের বিষয়টিও তুলে ধরবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জানা গেছে, মন্ত্রী দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগামী ১৮ মে ফলোআপ বৈঠক করবে। ওই বৈঠকেই সাগরে ভাসমান বাংলাদেশিদের উদ্ধারের জন্য কী কী করণীয় তা ঠিক করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি চলমান সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বৈঠক করেছে। বুধবার (১৩ মে) অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচার হওয়া এবং ওইসব দেশের জলসীমায় ভাসমান বাংলাদেশিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণের বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশ ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে পাচারকারীদের নৌযানে সাগরে ভাসমান বাংলাদেশিদের উদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে মানবপাচার প্রতিরোধে সরকারের আভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষে শুক্রবার (১৫ মে) স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কক্সবাজার পৌঁছেছেন। কক্সবাজারের মহেশখালিতে যাবেন মন্ত্রী এবং শনিবার বিকেলে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবপাচার নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর ওইদিনই অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) আবু হেনা মো. রহমাতুল মনিম বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বৈঠক করে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মানবপাচার প্রতিরোধে সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটি বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে। অন্যদিকে পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযানও জোরদার করা হয়েছে।
সর্বশেষ অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আট জনকে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায়ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে এসব পদক্ষেপের মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৩ মে) প্রায় আট শতাধিক বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাকে বহনকারী দু’টি নৌকাকে সমুদ্রে ফেরত পাঠায় মালয়েশিয়া। তারপর থেকে যাত্রীদের নিয়ে সাগরে ভাসছে নৌকা দু’টি।
এ ঘটনার পর জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।